ইভিএম নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ, ব্যালট ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনে সমাজকর্মীরা, সব দলের উদ্দেশে খোলা চিঠি

ইভিএম নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে অসন্তোষ। ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফেরার দাবি প্রথম জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর সেই একই কথা কখনও শোনা গিয়েছে মায়াবতীর মুখে আবার কখনও ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা করে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে সিপিএমের মুখপত্র পিপলস ডেমোক্রেসিতে। ভোটের ফল দেখে অবাক সাংবাদিক, সরকারি আধিকারিক ও আমলাদের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইভিএম নিয়ে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একজোট হয়ে ইভিএম বাতিলের দাবি জানায়নি। এবার এই প্রেক্ষিতেই গণতন্ত্র রক্ষায় ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফেরার দাবি জানালেন সমাজকর্মী ও ছাত্র নেতারা। খোলা চিঠি দিলেন সমস্ত রাজনৈতিক দলকে।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ায় একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল ইভিএম বিরোধী রাষ্ট্রীয় জন আন্দোলনের কর্মীরা। সেখানে সমাজকর্মী ও ছাত্রনেতারা সমবেতভাবে দাবি জানালেন, গণতন্ত্র রক্ষায় ভোট হোক ব্যালট পেপার দিয়ে। যদিও ইভিএমে কারচুপি সম্ভব নয়, নির্বাচন কমিশন এখনও এই সিদ্ধান্তেই অনড়। সাংবাদিক বৈঠকে সেই ইভিএম নিয়েই একাধিক গুরুতর প্রশ্ন তুললেন আন্দোলনকারীরা। যে প্রশ্নের উত্তর এখন কমিশন থেকে এসে পৌঁছয়নি বলেও দাবি করেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ইভিএমে যে চিপ ব্যবহার করা হয় তা রিপ্রোগ্রামেবল। জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি এন সাই বালাজির কথায়, নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছিল, ইভিএমে যে চিপ ব্যবহার হয় তা ‘ওয়ান টাইম প্রোগ্রামেবল’। অর্থাৎ, চাইলেও সেই চিপে নতুন প্রোগ্রাম ভরা যায় না। কিন্তু একটি আরটিআইয়ের উত্তরে জানা গিয়েছে, ইভিএমের চিপে ফ্ল্যাশ মেমরি ব্যবহার করা হয়। সুতরাং ইভিএমের চিপ রিরাইটেবল বা পুনঃব্যবহারযোগ্য। স্বভাবতই ইভিএম কারচুপির আশঙ্কা থেকেই যায়। বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চেয়েও মেলেনি বলে অভিযোগ ছাত্র নেতার। সমাজকর্মী শবনম হাশমি বলেন, ২০১৯ লোকসভা ভোটে ইভিএম কারচুপির জয় হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটে ইভিএম ব্যবহার না করারও আবেদন জানান তিনি। সমাজকর্মী ও চিত্র পরিচালক গওহর রাজার যুক্তি, প্রযুক্তি বলছে, যে কোনও মেশিনেই কারচুপি সম্ভব, ইভিএমও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই ইভিএম কেবল আর প্রযুক্তিগত সমস্যা নেই, রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে উঠেছে। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের অধ্যাপক নন্দিতা নারাইন বলেন, কোনও রাজনৈতিক দল যতই শক্তিশালী হয়ে উঠুক, তারা মানুষের বাক্ স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারে না। ভোটে যে পদ্ধতিই ব্যবহার করা হোক, তা যেন নিশ্ছিদ্র ও স্বচ্ছ হয়, বলে দাবি করেন তিনি। এই ইস্যুতে দেশের সবকটি রাজনৈতিক দলকেই খোলা চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের কাছে তাঁদের আবেদন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতার স্বার্থে এবং গণতন্ত্র বাঁচাতে ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফেরার দাবি তোলা হোক। প্রয়োজনে নির্বাচন বয়কটের দাবিও তুলতে পারে রাজনৈতিক দলগুলি, বলে চিঠিতে আবেদন জানানো হয়েছে।

Comments are closed.