‘পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গল রাজ চলছে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেনজির আক্রমণ আরএসএস-এর মুখপত্রে। কেউ বিশ্বাস করে না, পালটা তৃণমূল

আরএসএসের মুখপত্রে এবার নজিরবিহীন আক্রমণ করা হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারকে। পশ্চিমবঙ্গে ‘জঙ্গল রাজ’ চলছে বলে আরএসএসের ইংরেজি মুখপত্র অর্গানাইজারে লেখা হয়েছে, ‘সিপিএম আমলের জঙ্গল রাজ কাটিয়ে নতুন বাংলার আশা করেছিলেন রাজ্যের মানুষ, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে এমন ”মাংসাশী” (কারনিভোরস) প্রাণী প্রতিপালন করছেন, যা রাজনৈতিক পরিবেশে আরও অন্ধকার ডেকে এনেছে।’ বাংলা সম্পর্কে এই লেখায় বলা হয়েছে, ‘এখানে হিন্দু, বিশেষ করে দলিতরা আক্রান্ত, এই রাজ্য জেহাদিদের নিরাপদ আশ্রয় এবং বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের এখানে স্বাগত জানানো হয়।

১৫ ই অক্টোবর, সোমবার আরএসএসের মুখপত্র অর্গানাইজারে তৃণমূল নেত্রীকে এমন তীব্র আক্রমণ করে প্রকাশিত লেখাকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক পুজোর মুখে এই ধরনের লেখা রাজ্যের রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা বলে মনে করছে তৃণমূল শিবির।
লেখার শুরুতেই উদ্ধৃত করা হয়েছে জনৈক এক ব্যবসায়ী শৈলেন্দ্র ঝা’কে। লেখা হয়েছে, ‘ব্যবসার কাজে এই ব্যবসায়ী কয়েকদিন কলকাতায় ছিলেন। কলকাতা থেকে ফিরে তিনি জানিয়েছেন, ”বাংলায় সব সময় একটা ভয়ের পরিবেশ কাজ করে”। এই ব্যবসায়ী নিজে কংগ্রেসি মনোভাবাপন্ন, কিন্তু তিনি জানিয়েছেন, ”একমাত্র বিজেপিই পারে বাংলাকে বাঁচাতে। কারণ, তৃণমূল শাসনে বাংলাদেশি মুসলিমরা এই রাজ্যকে দখল করে নিচ্ছে”। যদিও এই ব্যবসায়ী শৈলেন্দ্র ঝা কোথায় থাকেন, কী ধরনের ব্যবসা করেন বা এরাজ্যে তাঁর নির্দিষ্ট কী অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি এই প্রতিবেদনে।
অর্গানাইজারের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘গত তিন বছরে এই রাজ্যে মৌলবাদী জেহাদিদের হাতে দলিত হিন্দুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলামপুরে পুলিশের গুলিতে দুই দলিত ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে’। এছাড়াও লেখা হয়েছে, ‘২০১৫ সালে কালিগঞ্জে তফশিলী জাতিভূক্ত তিনজনকে খুন করেছে মুসলিম মৌলবাদীরা। ২০১৬ সালে জেহাদিরা খড়গপুরে খুন করে এক হিন্দু দলিতকে।’
পাশাপাশি, তৃণমূল আমলে বাংলা জেহাদিদের স্বর্গরাজ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে বলেও লেখা হয়েছে আরএসএসের মুখপত্রে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে। উল্লেখ করা হয়েছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূলের দুই সাংসদ আহমেদ হাসান ইমাম ও ইদ্রিশ আলির নাম। লেখা হয়েছে, ‘সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জামাত উলেমায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক, যে সংগঠন বন্দেমাতরম-এর বিরোধিতা করেছিল। সাংসদ হাসান ইমাম নিজে বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ রাখেন’। ফিরহাদ হাকিমের নাম উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, তিনি নিজের বিধানসভা এলাকাকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বলেছিলেন। আর ইদ্রিশ আলির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ২০০৭ সালে পার্ক সার্কাসের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার।
অর্গানাইজারে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি তো বটেই আরএসএসেরও নাম করে তাদের কার্যকলাপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। দেশকে ধর্মের নামে ভাঙার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। পুজোর সময়ও রাজ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে তিনি বার্তা দিয়েছেন। পুজোয় মুখ্যমন্ত্রী স্লোগানও দিয়েছেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। কিন্তু ষষ্ঠীর দিন যেভাবে ধর্ম এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করে আরএসএসের মুখপত্রে বেনজির আক্রমণ করা হয়েছে, তা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের অন্দরে। তৃণমূলের বক্তব্য, আরএসএসের এই ধরনের কথা রাজ্যের কোনও মানুষ বিশ্বাস করে না। কিন্তু রাজ্যের পরিবেশ বিষিয়ে দেওয়ার জন্য এই ধরনের প্ররোচনামূলক কথা প্রচার করা হচ্ছে। যদিও তার কোনও প্রভাব এরাজ্যে পড়বে না।

Comments are closed.