পথশিশুদের শিক্ষার জন্য ‘স্কুল অন হুইলস’ ঘুরছে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়

কলকাতার ফুটপাথে এক চিলতে পলিথিনের আশ্রয় ওদের ঠিকানা। তার মধ্যেই মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সরস্বতী, মঙ্গল, রেহানারা। ওরা কলকাতার বিভিন্ন এলাকার পথশিশু। এই পথশিশুদের পড়াশোনার জন্য চালু হয়েছে বাসের মধ্যে সপ্তাহে আস্ত একটা স্কুল। যার পোশাকি নাম ‘স্কুল অন হুইলস’। শহর কলকাতার মোট আটটি এলাকায় সরস্বতী, মঙ্গলদের মতো পথশিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সাল থেকে ‘হেল্প আস, হেল্প দেম’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শুরু করেছে এই চলমান স্কুল। শোভাবাজার, বাগবাজার, রাজাবাজার, বেলগাছিয়া, হেস্টিংস, পার্ক সার্কাস, বিবাদী বাগ সংলগ্ন এলাকার পথশিশু ও বস্তির শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে এই চলমান স্কুলে। ঘড়ির কাঁটা ধরে সকাল সাড়ে সাতটায় শুরু হয়ে যায় স্কুল। বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে প্রতি এলাকায় দু’ ঘন্টা ধরে চলে স্কুল।
স্কুলের সিনিয়র টিচার ইনচার্জ পামেলা উপাধ্যায় জানালেন, এই শিশুদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ফুটপাথ বা বস্তি থেকে তুলে এনে এদের শিক্ষিত করে তোলার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। এই সব শিশু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিক হিসাবে কোথাও না কোথাও কাজ করত। তাই তাদের অভিভাবকরাও চাইতেন না, সন্তান স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করুক। স্বেছাসেবী সংস্থার সভাপতি মুক্তি গুপ্তা ও অন্য শিক্ষক- শিক্ষিকাদের লাগাতার প্রচেষ্টার ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী যে দিন যেখানে বাস থাকে, সেই এলাকার বস্তি বা ফুটপাথ থেকে  শিশুদের বাসের স্কুলে নিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর হাত-পা ভালো করে ধুয়ে বাসে ওঠানো হয়। এরপর নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরে প্রথমেই প্রার্থনা এবং ভালো মানুষ হয়ে ওঠার শপথ নিতে হয় প্রত্যেককে। এরপর ক্লাস শুরু। মূলত, এই বাসের স্কুল থেকে পড়ুয়ারা যাতে মূল ধারার স্কুলে যেতে পারে তার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও আছে।
বর্ণ পরিচয়, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ দেওয়া হয় স্কুলে। শেখানো হয় কম্পিউটারের খুঁটিনাটি। এই বাসের স্কুলেই আছে লাইব্রেরীও। এই সব পড়ুয়ার জন্য বাসে ব্যবস্থা করা হয়েছে পুষ্টিকর খাদ্যেরও। নিয়মিত দুধ, ফল, ছাতু  দেওয়া হয় দরিদ্র পরিবারের এই সব ছাত্র-ছাত্রীদের। বাস স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানালেন, তাঁদের এই স্কুল থেকে মূল স্কুলে গিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছেন দু’জন পড়ুয়া। রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন আবাসিক স্কুলে সুযোগ পেয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। চার্জ পামেলা উপাধ্যায় বলেন, ফুটপাথ বা বস্তি থেকে তাঁরা এই সব পড়ুয়াদের নিয়ে আসছেন একটাই কারণে, যাতে শিশু শ্রম মুক্ত একটা পৃথিবী উপহার দেওয়া যায়। যেখানে শিক্ষায় কোনও বৈষম্য থাকবেনা। প্রতিটা শিশু পাবে শিক্ষার সুযোগ।

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.