‘আমার অভিশাপেই মৃত্যু হেমন্ত কারকারের’, মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্ত এবং বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞার মন্তব্যে বিতর্ক

‘হেমন্ত কারকারে ছিল দেশদ্রোহী এবং ধর্মদ্রোহী। আমি ওকে বলেছিলাম, তোর সর্বনাশ হবে। দেড় মাস পরেই ২৬/১১ র আক্রমণে কারকারে মারা গিয়ে শিক্ষা পেয়েছে’।
কথাগুলি বলেছেন ভোপালের বিজেপি প্রার্থী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। সেই প্রজ্ঞা সিংহ, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ। মালেগাঁও বিস্ফোরণে প্রজ্ঞা সিংহের বাইক ব্যবহার করা হয়েছিল। এমনকী বিস্ফোরণের পর, কেন কম ক্ষতি হল, তা নিয়ে প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর ধমকও দিয়েছিলেন বলে তদন্তে উঠে আসে।
আর তিনি যাঁর সম্বন্ধে উপরের কথাগুলো বলছেন, তিনি হেমন্ত কারকারে। ২৬/১১-য় সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন যিনি। ভারত সরকার মহারাষ্ট্র এটিএস চিফ হেমন্ত কারকারেকে অশোক চক্র উপাধিতে সম্মানিত করেছিল। সারা দেশের পুলিশ কর্মী ও অফিসাররা, যাঁকে নিজের আইডল বলে মানেন।
২০০৮ এর ২৯ শে সেপ্টেম্বর মুম্বই শহর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরের মালেগাঁওয়ে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয়েছিলেন শতাধিক। এই অবস্থায় মামলার তদন্তভার নেয় মহারাষ্ট্র এটিএস। যার প্রধান হেমন্ত কারকারে। শুরু থেকেই প্রজ্ঞা সিংহকে বাঁচাতে চাপ আসতে থাকে হেমন্ত কারকারের উপর, কিন্তু কোনও চাপের কাছেই মাথা নত করেননি তিনি। পরিস্থিতি এমনই হয় যে হেমন্ত কারকারের বিরুদ্ধে পথে নেমে বিক্ষোভ পর্যন্ত দেখিয়েছিল বেশ কয়েকটি গেরুয়াপন্থী সংগঠন, ছিলেন বিজেপি নেতারাও। তারপর মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার তদন্তভার যায় এনআইএ-র হাতে। কিছুদিন তেড়েফুঁড়ে তদন্ত চলার পর ভাঁটার টান আসে তাতে। একটা সময় এনআইএ আদালতে আবেদন করে প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুরের বিরুদ্ধে প্রমাণ না মেলার। তাই তাঁকে বেকসুর খালাস করা হোক। কিন্তু আদালত এনআইএ’র ক্লিনচিট খারিজ করে দিয়ে বলে, যাঁর বাইক বিস্ফোরণস্থলে পাওয়া যায়, তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলছে না, এই দাবি মেনে নেওয়া কঠিন।
২০১৭ সালে শারীরিক কারণে তাঁকে জেল থেকে মুক্তি দেয় আদালত। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। হাতে গরম পুরস্কার হিসেবে পেয়ে যান ভোপালে বিজেপির হয়ে লড়ার টিকিট।
প্রজ্ঞা সিংহের এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মন্তব্য থেকে দুরত্ব তৈরি করেছে বিজেপিও।

Comments are closed.