ফর্সা হওয়া, মোটা থেকে রোগা-এমন চমক দেওয়া বিজ্ঞাপন দিলে ৫ বছর জেল, ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা! কড়া আইন আনছে কেন্দ্র

ফর্সা হওয়ার ক্রিম, বেঁটে থেকে লম্বা হওয়া, মোটা থেকে রোগা হওয়া, নতুন করে টাকে চুল গজানো, এমন নানা বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলে টাকা খোওয়ান প্রচুর মানুষ। এবার এইসব পণ্যের বিজ্ঞাপন রুখতে ১৯৫৪ সালের ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিজ (অবজেকশনেবল অ্যাডভাইটার্সমেন্ট) অ্যাক্টের সংশোধন করছে কেন্দ্র। রোগা থেকে মোটা হওয়া, মোটা থেকে রোগা হওয়ার, ফর্সা হওয়ার ক্রিম, মন্ত্র ও কবজ দিয়ে বিভিন্ন অসুখ সারানোর মতো বিজ্ঞাপনী প্রচার করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় খসড়ায়।

কী রয়েছে কেন্দ্রের এই নয়া খসড়ায়?
গত ৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের এই ড্রাফটে বলা হয়েছে, সময় পরিবর্তন ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ১৯৫৪ সালের  ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিজ (অবজেকশনেবল অ্যাডভেটাইসমেন্টস) অ্যাক্টের সংশোধন প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট আইনের বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে এই খসড়ায়। যার মধ্যে রয়েছে কালো থেকে ফর্সা হওয়ার ক্রিমের মতো ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট, বিভিন্ন যন্ত্রের বিজ্ঞাপন যেখানে দাবি করা হয়, চটজলদি আপনার মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পারেন কিংবা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে টাকে চুল গজাবে, এমন সমস্ত বিজ্ঞাপনী প্রচার করলে ২০২০ সালের সংশোধনী ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিজ (অবজেকশনেবল অ্যাডভেটাইসমেন্টস) বিলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে।

নয়া আইনে শাস্তির মাত্রা:
খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথমবার কেউ অপরাধী প্রমাণিত হলে ১০ লক্ষ টাকার উপর জরিমানা এবং দুই বছরের বেশি জেল হতে পারে। একই অপরাধে ফের কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। সেই সঙ্গে জরিমানার অঙ্ক হতে পারে ৫০ লক্ষ টাকা।
বর্তমান আইনে প্রথমবার অপরাধের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জেল হয়, সেই সঙ্গে অপরাধ অনুযায়ী জরিমানার মূল্য ধার্য হয় আবার নাও হতে পারে। তবে সংশোধনী বিলে জেল ও জরিমানা দুটোর কথাই বলা হচ্ছে। বর্তমান আইনে দ্বিতীয়বার  অপরাধের ক্ষেত্রে জরিমানা সহ অথবা জরিমানা ছাড়া একবছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আইন সংশোধনে যে বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে:
কবচ,মন্ত্র কিংবা যেখানে অবাস্তব ও অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের বিজ্ঞাপনী প্রচার করা হয় এবং অসুখ সারাতে গিয়ে রোগীর কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়, তাঁর পরিবার, প্রতিবেশীরা প্রভাবিত হন এমন সব পণ্যের বিজ্ঞাপন ঠেকাতে কড়া নজর দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপনের সংজ্ঞা:
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট খসড়ায় বলা হয়েছে, পরিবর্তিত সময়ে বিজ্ঞাপনের সংজ্ঞাও কিছুটা পাল্টে গিয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, যে কোনও অডিয়ো ও ভিস্যুয়াল প্রচার, আলো, শব্দ, ধোঁয়া, গ্যাস ইত্যাদি দিয়ে কোনও পণ্যের এনডোর্সমেন্ট, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ইন্টারনেট কিংবা ওয়েবসাইট, কোনও সার্কুলার, নোটিস, লেবেল, র‍্যাপার, ব্যানার, শব্দ, পোস্টার ও অন্যান্য ডকুমেন্টের মাধ্যমে প্রচার হয় তাই হল বিজ্ঞাপন। তবে লেবেল ও র‍্যাপার তখনই একটি বিজ্ঞাপন হতে পারে, যদি সেখানে উপযুক্ত তথ্য কিংবা দাবির উল্লেখ থাকে।

ওষুধ ও প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা:
কেন্দ্র এই ড্রাফট বিলে ৭৮ টি অসুখের মোকাবিলায় যে ওষুধ ও প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনী প্রচার হয়, তা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই ৭৮ টি অসুখ, ব্যাধি, শারীরিক অবস্থার নিরাময়ে টিভি থেকে খবরের কাগজ, রাস্তায় ব্যানার, ফেস্টুনে কোনওরূপ বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না বলে এই সংশোধনী বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে। যে ওষুধগুলির বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হয়েছে তার কয়েকটি হল, ফেয়ারনেস ক্রিম, ওবেসিটি, শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধির ওষুধ, জিনঘটিত বিভিন্ন অসুখের ওষুধ, পাইরিয়া, যৌন অক্ষমতা, চুলপড়া নিরাময়ের মলম, তেল কিংবা ওষুধ ইত্যাদি। ১৯৫৪ সালের আইনে এমন ৫৪ টি অসুখ, ব্যাধির কথা বলা আছে।
সংশ্লিষ্ট খসড়া নিয়ে সাধারণ নাগরিক থেকে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মন্তব্য,পরামর্শ, আপত্তি থাকলে তা ৪৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। তারপরেই এই বিল নিয়ে এগোবে কেন্দ্র।

Comments are closed.