বিকেলের হাল্কা টিফিন হোক কিংবা সন্ধ্যা আড্ডা, মুড়ির জুড়ি মেলা ভার। রাজ্যের একটি বড় অংশের মানুষ সকালের প্রাতরাশেও মুড়ি খেয়ে থাকেন। কিন্তু শুধু মুড়ি খাওয়াকে কেন্দ্র করে আস্ত একটি মেলা হয় আমাদের রাজ্যে, এ কথা জানতেন কি?
প্রতি বছর মাঘ মাসের ৪ তারিখ বাঁকুড়া জেলার ১ নম্বর ব্লকের কেঞ্জাকুড়ায় বসে মুড়িমেলা। বছরের ওই নির্দিষ্ট দিনে দ্বারকেশ্বরের চর হয়ে ওঠে কার্যত মুড়িময়। আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মনুষ হইহই করে মেলায় আসেন মুড়ি খাওয়াকে কেন্দ্র করে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি বছর মেলার দিন আশেপাশের ৫০-৬০ টি গ্রামের মানুষ একত্রিত হন দ্বারকেশ্বরের চরে। শীতের রোদ গায়ে মেখে হাজার হাজার মানুষ নদীর চরে বসেন মুড়ি খেতে। সেই মুড়ি মাখাও হয় বেশ রাজকীয় ভাবে। চপ, বেগুনি সহ হরেকরকম তেলেভাজার সঙ্গে তালিকায় থাকে নানান রকমের চানাচুর, তরকারি আরও কতকি। একটি বড় গামছা বা খবরের কাগজ বিছিয়ে আয়েশ করে শুরু হয় মুড়ি মাখা। তারপর একসঙ্গে বসে সবাই মিলে সেই লোভনীয় মুড়ির স্বাদ ভাগ করেন।
মেলার নামের মতোই এর ইতিহাসও বেশ চমকপ্রদ। বাঁকুড়া শহর থেকে ২০ কিমি দূর থেকে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর নদ। নদের ধারেই রয়েছে সঞ্জীবনি মাতার আশ্রম। ফি বছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে মাঘ মাসের ১ তারিখ থেকে ৪ তারিখ পর্যন্ত আশ্রমে হরিনাম সংকীর্তনের আসর বসে। বহু দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই কীর্তন শুনতে।
স্থানীয়দের মতে, এক সময় আশ্রমের আশেপাশের এলাকা ছিল গভীর জঙ্গলে ঢাকা। কীর্তন শোনার পর রাতে ওই জঙ্গল পেরিয়ে কেউ বাড়ি ফিরতে পারতেন না। সে সময় রাতে খাওয়ারের জন্য ভক্তরা বাড়ি থেকে মুড়ি আনতেন। কীর্তন শেষে সবাই একসঙ্গে বসে সেই মুড়ি খেতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রেওয়াজই মেলার রূপ নেয়। ১৫০ বছরের পুরনো এই মেলা হলেও গত ৩০ বছর মুড়িমেলা প্রচারের আলোয় এসেছে।
প্রতি বছর মেলা হলেও বাঁকুড়া প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছর কোভিড পরিস্থিতির কারণে মেলা নাও হতে পারে।
Comments are closed.