জলের ব্যবহারে গাড়িতে কমবে পেট্রোপণ্যের চাহিদা, নয়া পন্থা উদ্ভাবন দুই বাঙালি অধ্যাপকের

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণের জেরে দুনিয়াজুড়ে যখন জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প খোঁজার ও ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন এই ক্ষেত্রে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখলেন রাজ্যের দুই বাঙালি অধ্যাপক-গবেষক। হলদিয়া ইন্সস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এইচআইটি) কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই অধ্যাপক ডঃ বিশ্বজিৎ মন্ডল ও ডঃ সুনীল বরণ ক্যুইলা এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা গাড়িতে ব্যবহার করলে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে পেট্রল-ডিজেলের ব্যবহার। এবং সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হল, পেট্রোপণ্যের ব্যবহার কমাতে এই যন্ত্রে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে জল! অর্থাৎ বকলমে জলই সন্ধান দিচ্ছে পেট্রল-ডিজেলের ব্যবহার কমানোর বিকল্প ব্যবস্থার। এই যন্ত্রটি তৈরি করতে তাঁদের সাহায্য করেছেন সুকুমার বাগ নামে দিল্লির এক গবেষক।

ডঃ সুনীল বরণ ক্যুইলা

অধ্যাপক সুনীল বরণ ক্যুইলা thebengalstory.com কে জানিয়েছেন, জলের প্রাথমিক দু’টি উপাদান হল হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন (H2o)। জলের ইলেক্ট্রোলাইসিস করলে তা HHo তে ভেঙ্গে যায়। যাকে চলতি কথায় ‘ব্রাউন গ্যাস’ বলা হয়। চরিত্রগত বৈশিষ্টের দিক দিয়ে হাইড্রোজেনের বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা থাকলেও, যদি এই ব্রাউন গ্যাস তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করা যায় তবে হাইড্রোজেনের বিস্ফোরক ক্ষমতা লোপ পায়। এই ব্রাউন গ্যাস অন্যান্য ক্ষেত্রে বিকল্প জালানি হিসাবে ব্যবহৃত হলেও, এক্ষেত্রে এটি ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।


এই বিষয়টি নতুন না হলেও, ব্রাউন গ্যাসের এই চারিত্রিক ধর্মটি ব্যবহার করে অধ্যাপক সুনীল বরণ ক্যুইলা, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ মন্ডল এবং সুকুমার বাগ এমন একটি যন্ত্র বা ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে। গবেষকরা  জানিয়েছেন, যে যন্ত্রটি তাঁরা বানিয়েছেন তার নাম ব্রাউন গ্যাস জেনারেটর ফর অটোমোবাইল ইঞ্জিন। এটা মূলত এক ধরণের ইলেক্ট্রোলাইজার। গাড়ির অটোমোবাইল ইঞ্জিনের পাশে এই যন্ত্রটি বসাতে হবে। গাড়ির ব্যাটারি থেকেই প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ শক্তি পাবে এই ব্রাউন গ্যাস জেনারেটরটি। উপকরণ হিসাবে যন্ত্রের মধ্যে দিতে হবে জল। গাড়ির ব্যাটারির সাহায্যে এই জেনারেটরটি একবার চলতে আরম্ভ করলে, সেখানে নিজে-নিজেই ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমে জল থেকে তৈরি হতে শুরু করবে ‘ব্রাউন গ্যাস’। গবেষকদের দাবি, এই জেনারেটর বা ইলেক্ট্রোলাইজারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে গাড়ির ইঞ্জিন (হাইব্রিড ইঞ্জিন)। ফলে উৎপন্ন ব্রাউন গ্যাস সরাসরি পৌঁছে যাবে গাড়ির ইঞ্জিনে। বাড়বে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা। সুনীলবাবুর দাবি, এর ফলে কম পেট্রোপণ্য ব্যবহার করে বেশি মাইলেজ পাওয়া যাবে। যার জন্য সাশ্রয় হবে প্রায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পেট্রল-ডিজেল খরচ।

ডঃ বিশ্বজিৎ মন্ডল

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ মন্ডল জানান, ২০০৯ সালে এই যন্ত্র তৈরির কাজ শেষ হলেও ২০১৭ সালে তাঁরা কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক থেকে এর পেটেন্ট পেয়েছেন। ২০ বছরের জন্য হলদিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির নামে পেটেন্ট দেওয়া হয়েছে। বাজারে এলে, বিভিন্ন গাড়ির মডেলের উপর ভিত্তি করে এই যন্ত্রটির দাম পড়তে পারে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। উদ্ভাবকরা জানিয়েছেন, বাণিজ্যিকভাবে এই ব্রাউন গ্যাস জেনারেটর বাজারে আনার আগে তাঁরা শেষ পর্যায়ের কিছু খুঁটিনাটি বিষয় এখন পরীক্ষা করছেন। তা শেষ করে চেষ্টা চলছে যত দ্রুত সম্ভব এই ডিভাইজস বিক্রির জন্য বাজারে আনার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.