ত্রিপুরায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ লাগামছাড়া। বিজেপি শাসিত উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে প্রতিদিনই কমবেশি ৫০০ জন সংক্রমিত হচ্ছেন। অভিযোগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। এবার ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা ত্রিপুরা হাইকোর্টের। আগরতলা হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার হাল দেখে শুক্রবার মামলা দায়ের হয়েছে এবং ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিপ্লব দেব সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে আদালত।
প্রধান বিচারপতি আকিল কুরেশি ও বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্রর ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হওয়া শুনানিতে আগরতলার জিবিপি হাসপাতালের কোভিড সেন্টারের পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আদালত বলে, সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন, বিশেষ করে স্থানীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে বারবার উঠে আসছে করোনা পজিটিভ রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের দুর্দশার কথা। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই আদালত মনে করছে, করোনা নিয়ে যে রাজ্যে যা ঘটছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান সংক্রান্ত যে সব খবর ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই বিষয়ে সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে।
ত্রিপুরায় অ্যাক্টিভ কোভিড রোগী কত, কটি কোভিড সেন্টার রয়েছে, তাতে মেডিক্যাল ও প্যারামেডিক্যাল স্টাফ কতজন রয়েছেন, চিকিৎসক এবং পরিষেবা কেমন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য বিপ্লব দেব সরকারের কাছে চেয়েছে হাইকোর্ট। তাছাড়া করোনা রোগী, রোগীর আত্মীয় ও চিকিৎসকদের মধ্যে যে যোগাযোগের অভাব আছে বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তা নিয়েও সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে প্রধান বিচারপতি আকিল কুরেশির ডিভিশন বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় গিয়েছিল দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় টিম। আগরতলা বিমানবন্দরে নেমে রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় দলকে বোঝানোর চেষ্টা হয়, মহাকরণ এবং আটটি জেলার প্রশাসন সর্বোতোভাবে চেষ্টা করছে সংক্রমণ ঠেকানোর। তবে সূত্রের খবর, সে কথায় চিঁড়ে ভেজেনি। আগরতলা-সহ সমগ্র ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় টিম। গত সপ্তাহ থেকে জেলা সফর শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি কোভিড কেয়ার সেন্টারেও যাচ্ছেন তিনি। যদিও এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, জেলা সফর করে আসলে করোনা পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সরকার যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ তা হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় আরও একবার প্রমাণ হল।