করোনা নিয়ে প্রকাশিত খবরের জেরে ত্রিপুরার বাংলা কাগজ দৈনিক সংবাদকে শো-কজ করল বিপ্লব দেব সরকার

করোনা বিধ্বস্ত ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সংঘাত আরও তীব্র হল। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়েছে, নিন্দা চলছে সর্বস্তরে। এর মধ্যেই করোনা মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থার ছবি তুলে ধরে প্রশাসনের শো কজ নোটিস পেল ত্রিপুরার বাংলা কাগজ দৈনিক সংবাদ। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি প্রত্যাহারের জন্য ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে রাজ্যের গণমাধ্যম কর্মীদের যৌথ মঞ্চ ত্রিপুরা অ্যাসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিরোধীদের অভিমত, হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনা, কেন্দ্রীয় দলের প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ বিপ্লব দেবের রাজ্যে স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোহীনতাকেই বারবার সামনে এনে ফেলছে। ত্রিপুরায় সংবাদমাধ্যমের একাংশ রাজ্য সরকারের গাফিলতি নিয়ে রোজ খবর করছে। যা তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে এনে ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব সাব্রুমে এক সরকারি সভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, কয়েকটি সংবাদপত্র যা করছে তা ভোলা যাবে না। আমি বিপ্লব দেব, আপনাদের কথা দিচ্ছি আমি ভুলবো না। মনে রাখবেন, ইতিহাস বলছে বিপ্লব দেব যা কথা দেয়, তা করে দেখায়।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যেই দৈনিক সংবাদের ৩ সেপ্টেম্বর, ৪ সেপ্টেম্বর ও ১২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত তিনটি খবরের তথ্য প্রমাণ এবং বাস্তব ভিত্তি জানতে চেয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর, রবিবার সংবাদপত্রের অফিসে শো-কজ নোটিস পাঠিয়েছেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা, আগরতলার ডিএম। বলা হয়েছে, সোমবার বিকেল ৫ টার মধ্যে সাংবাদিক পারমিতা লিভিংস্টোন ও সম্পাদককে তথ্য প্রমাণ সহ কারণ দর্শাতে হবে।

পড়ুন দৈনিক সংবাদকে পাঠানো শো-কজ নোটিস: Show Cause Notice

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির পরই রাজ্যের দিকে দিকে সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ নেমে আসছে বলে অভিযোগ করেছে ত্রিপুরা অ্যাসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস। আমবাসা টিআরটিসি পাড়ায় ভাড়া থাকেন ত্রিপুরার স্থানীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিক পরাশর বিশ্বাস। অভিযোগ, শনিবার গভীর রাতে দুষ্কৃতীরা পরাশরের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে মারধর করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পরাশর বিশ্বাসকে কুলাই জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংবাদকর্মীদের সংগঠনের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির পর এরকম ঘটনা পাল্লা দিয়ে বেড়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
ত্রিপুরার সংবাদমাধ্যমের একাংশের অভিযোগ, করোনা সামলাতে রাজ্য সরকারের এতটাই শোচনীয় অবস্থা যে, আদালত থেকে কেন্দ্র লাগাতার সমালোচনা করছে। এই অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের মতো সফট টার্গেট বেছে নিয়ে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।

Comments are closed.