কোভিড ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য বাংলা থেকে প্রথম নির্বাচিত দুর্গাপুরের চিরঞ্জিত ধীবর বললেন, দেশসেবার সুযোগ পেয়েছি

ইচ্ছেপূরণ। বাংলার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনার হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নিতে চললেন দুর্গাপুরের চিরঞ্জিত ধীবর। ভারত বায়োটেকের করোনার টিকা কোভাক্সিন (Covaxin) এর হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নিতে এ রাজ্য থেকে আবেদন করেছিলেন ৫০ জনেরও বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবর রাজ্যের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ভারতে তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

গত এপ্রিল মাসে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন দুর্গাপুরের চিরঞ্জিত। গত রবিবার ICMR ফোন করে তাঁর আবেদন মঞ্জুরের খবর জানায়। এবার চূড়ান্ত মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওই শিক্ষক। ওড়িশা অথবা বিহারের পাটনায় তাঁর পরীক্ষা হবে বলে জানানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ভুবনেশ্বরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর উপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন চিরঞ্জিতবাবু।

হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক এবং ICMR এর যৌথ উদ্যোগে করোনা টিকার হিউম্যান ট্রায়াল হবে দেশের ১২ টি সংস্থায়। ট্রায়ালে অংশ নিতে হলে প্রথমে কিছু মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, তবেই শরীরে প্রয়োগ করা হবে করোনা প্রতিষেধক। ওই শিক্ষককে জানানো হয়েছে, ট্রায়ালের সময়ে মোট ৬ দিন তাঁকে হাসপাতালে যেতে হবে।

ICMR এর তরফে ফোন পেয়ে উত্তেজিত চিরঞ্জিত ধীবর। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, ট্রায়ালে অংশ নিতে খুব আগ্রহী ছিলাম, সেই ইচ্ছেপূরণ হল। লকডাউন পরিস্থিতিতে ওড়িশায় যেতে সমস্যা হলে প্রয়োজনে নিজের মোটরবাইকে চলে যাবেন, এমনই জানিয়েছেন চিরঞ্জিত ধীবর। তিনি বলেন, দেশ ও মানবসেবার ইচ্ছা ছিল। সেই সুযোগ অবশেষে পেয়েছি। সবাই তো এই সম্মান পান না, আমার সামনে সেই সুযোগ এসেছে। আমি নিশ্চিত, শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি দেশের মানুষকে করোনা থেকে মুক্তির পথ বাতলে দিতে ওই ভ্যাকসিন নিতে পারব। দেশবাসীর শুভেচ্ছা ও আর্শীবাদ রয়েছে আমার সঙ্গে।

প্রথম প্রথম ছেলের এই ইচ্ছেয় ভয় পেয়েছিলেন চিরঞ্জিতের বাবা-মা। কিন্তু পরে ছেলের উদ্যোগের কথা জানতে পেরে আর আপত্তি করেননি। চিরঞ্জিত ধীবরের মায়ের কথায়, দেশবাসীর আশীর্বাদ ওর সঙ্গে। ছেলে সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরবে আমার বিশ্বাস। দেশের মঙ্গল করলে ছেলেরও মঙ্গল হবে। বছর তিরিশের চিরঞ্জিতের এই সাহসী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তাঁর স্কুলের সহকর্মীরাও।

ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ভারতে তৈরি দুটি করোনা প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে। একটি হল কোভ্যাক্সিন (COVAXIN) আর একটি হল জাইকভ-ডি (ZyCov-D)। এই দু’টিকেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

Comments are closed.