আমরা শিবসেনা নই, বাঙালির অধিকার নিয়ে আমাদের লড়াই সাংবিধানিকঃ বাংলা পক্ষ

১৯১১ সালে কলকাতা থেকে দেশের রাজধানী সরে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ। স্বাধীনতার পরে কখনও সিপিএম, কখনও তৃণমূল অভিযোগ শানিয়েছে দিল্লি সরকারের কেন্দ্রীয়করণের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মাঝে হঠাৎই এক নতুন ইস্যুর আগমন রাজ্যের সামাজিক মানচিত্রে। বাংলা এবং বাঙালির অধিকারের দাবিতে শুরু হয়েছে এক দিল্লি বিরোধী আন্দোলন, যা হয়তো এখনও শৈশবে, কিন্তু শক্ত-সবল হয়ে ওঠার সব লক্ষণই তার মধ্যে বিদ্যমান। তৈরি হয়েছে একটি ফোরাম, ‘বাংলা পক্ষ”। কেন হঠাৎ এই আন্দোলন, যা শুনতে লাগছে রীতিমতো ‘প্রাদেশিক’, তা নিয়েই আমরা মুখোমুখি ‘বাংলা পক্ষে’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ইন্ডিয়ান স্টাটিসটিকাল ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের।

 

 

প্রশ্নঃ রাজ্যের ওপর কেন্দ্রের বঞ্চনার ইস্যু তো বহু বছর ধরেই ছিল, কিন্তু হঠাৎ ‘বাংলা’, ‘বাঙালি’ এই প্রাদেশিক শব্দগুলো কোথা থেকে এল?

গর্গ চট্টোপাধ্যায়ঃ মোটেও প্রাদেশিক নয়। আমরা শুধু বলছি, বাংলা এবং বাঙালির সংস্কৃতি, পুঁজি, ভাষার ওপর দীর্ঘ বছর ধরেই একটা আক্রমণ ছিল। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার ফেরত চাইছি। বাংলাতেই বাঙালির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। বাংলার ওপর এই আক্রমণ আরও তীব্র হয়েছে ২০১৪ সালে বিজেপি দিল্লিতে সরকার গড়ার পর। এই যে হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান এই কনসেপ্টের বিরোধী আমরা। ভাষার ভিত্তিতে দেশের রাজ্যগুলি তৈরি হয়েছিল, বিশেষ করে বাংলা। কিন্তু তার ওপর যেভাবে হিন্দির দখলদারি চলছে, এখনই রুখে না দাঁড়ালে দেরি হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ কিন্তু আপনার কথা তো ন’য়ের দশকের বাল ঠাকরের মতো শোনাচ্ছে। কিংবা আজকে ডোনান্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফর আমেরিকানস’-এর মতো, জাতিসত্ত্বার রাজনীতি…

গর্গ চট্টোপাধ্যায়ঃ শোনাচ্ছে, কারণ এই ভাষ্যে আমরা অনভ্যস্ত। কিন্তু উত্তর প্রদেশে এসপি, তামিলনাডুতে ডিএমকে, তেলেঙ্গানায় টিআরএস কিংবা কর্ণাটকে কংগ্রেসও একই কথা বলছে। প্রত্যেক রাজ্যই আজ নিজের অধিকারের কথা বলছে। আমরা শুধু বলছি, উত্তর প্রদেশে একজন হিন্দিভাষীর বা হিন্দুস্থানীর যে অধিকার আছে, বাংলায় বাঙালির সেই অধিকার চাই। এখানে পুঁজির ওপর বাঙালির অধিকার নেই, শিক্ষার ওপর অধিকার নেই, সংস্কৃতির ওপর অধিকার খর্ব হচ্ছে। তা আমাদের ফেরত চাই। তাছাড়া শিবসেনা একটি সাম্প্রদায়িক এবং সংবিধান বিরোধী দল। আমরা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এবং সংবিধানের পক্ষে। তাই আমরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ, দিল্লির সরকার সাম্প্রদায়িক এবং সেই কারণেই দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে।

প্রশ্নঃ আপনারা বলছেন, বাঙালির অধিকার ফেরত চাই। কিন্তু বাঙালি তো নিজেই পুঁজির লড়াইয়ে হেরে গিয়েছে…

গর্গ চট্টোপাধ্যায়ঃ মোটেও না, তাকে চক্রান্ত করে হারানো হয়েছে। ছোট্ট উদাহারণ দিচ্ছি। রাজ্যে কনস্টেবল পরীক্ষা হবে। আমরা চাই সেই পরীক্ষা শুধু বাংলা এবং নেপালিতে নেওয়া হোক। কিন্তু সম্প্রতি সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠন এবং একটি ইসলামিক সংগঠন এই পরীক্ষা হিন্দিতেও নেওয়ার দাবি জানিয়েছে, এটা কেন হবে? এখানে রাজ্যের প্রশাসনিক অফিসার নিয়োগের পরীক্ষা পাশের পর বাধ্যতামূলক হিন্দি ভাষায় পরীক্ষা দিতে হয়। আমরা এর বিরুদ্ধে। উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটকে তো এমন হয় না।

প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আপনাদের প্রধান দাবিটা কী?

গর্গ চট্টোপাধ্যায়ঃ আমরা মনে করি পররাষ্ট্র, রেল, মুদ্রা এবং প্রতিরক্ষা ছাড়া আর কোনও দফতর দিল্লির হাতে থাকা উচিত নয়। শিক্ষা তো নয়ই। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আমরা রাজ্যের হাতে আরও বেশি ক্ষমতার পক্ষে। তা আদায় হলেই বাংলা এবং বাঙালিকে হাতে এবং ভাতে মারার যে চক্রান্ত হচ্ছে, তার মোকাবিলা করা যাবে।

প্রশ্নঃ বাংলা পক্ষ যা বলছে, লোকে তো মনে করবে, ২০১৯ লোকসভা ভোটার আগে আপনারা তৃণমূল কংগ্রেসের সহকারী শক্তি হিসেবে কাজ করছেন।

গর্গ চট্টোপাধ্যায়ঃ একেবারেই তা নয়। রাজ্যের কাছেও আমাদের অনেক দাবি আছে। আপাতত এই দাবিগুলো নিয়ে আমরা স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচার করছি। শিগগিরই বিভিন্ন দাবিতে সাক্ষর সংগ্রহ শুরু করব। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে যে দাবিগুলো সামনে রেখে আমাদের লড়াই, তার সঙ্গে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস যে কেউই আসতে পারে। আমরা দলীয় রাজনীতি করছি না, বাংলা এবং বাঙালির কথা বলছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.