ধারা ৩৭০: কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনায় কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি পাশে পেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে কেন্দ্রের ঘোষণার পর সংসদে বেনজির পরিস্থিতি। অবস্থা এমনই যে, শাসক-বিরোধীর যাবতীয় সমীকরণ ভেঙে চুরমার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন রাজ্যসভায় এই ঘোষণা করলেন তখন সরকারপন্থী প্রায় সবকটি দলকেই প্রত্যাশিতভাবে পাশে পেয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে বিজেপি পাশে পায়নি অন্যতম পুরনো জোটসঙ্গী জেডিইউকে। নীতিশ কুমারের দল, শুরু থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ তকমা হঠানোর বিপক্ষে। তবে চমকের আরও বাকি ছিল। পুরনো শরিক জেডিইউয়ের সমর্থন না পেলেও মোদী-অমিত শাহ চূড়ান্ত অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে গেলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের সমর্থন। সব মিলিয়ে ধারা ৩৭০ বিলোপের দিন, এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক সমীকরণের সাক্ষী থাকল সংসদ।
সোমবার রাজ্যসভায় ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী শিবির থেকে শুরু হয়ে যায় তুমুল বিরোধিতা। কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদের মন্তব্যে মুহুর্মুহু সমর্থন জানিয়ে যেতে থাকেন বাকি কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম সাংসদরা। তাঁদের সঙ্গ দেন জেডিইউ সাংসদরাও। এদিকে সরকারের সঙ্গে যায় নবীন পট্টনায়কের বিজেডি, মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। দক্ষিণের দুই রাজনৈতিক দল, ওয়াইএসআরসি এবং এআইএডিএমকে এই ইস্যুতে শুরু থেকেই সরকারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিন আলোচনা চলাকালীন জেডিইউ সাংসদ কে সি ত্যাগী বলেন, আমাদের দল জয় প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়া, জর্জ ফার্নান্ডেজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহন করছে। এই ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে ধারা ৩৭০ বিলোপের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের সভাপতি নীতিশ কুমার। অথচ দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার ওয়ান পয়েন্ট অ্যাজেন্ডায় লোকসভা ভোটে লড়া আপ, মোদী-অমিত শাহের পাশেই দাঁড়িয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে ট্যুইটও করেছেন।
এদিকে কংগ্রেসের তরফে এই সিদ্ধান্তকে, সংবিধানকে হত্যা করার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ কিংবা চিদম্বরমরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বাকি কাশ্মীরকে দেশ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন, এবারই প্রকৃতপক্ষে কাশ্মীরিদের ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হল। এর সুফল তাঁরা পাবেন। তবে সবচেয়ে কড়া আক্রমণ আসে তৃণমূলের তরফে। রাজ্যসভায় ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, আজ কালো সোমবার। সংবিধানকে হয় ভুলে যাওয়া হয়েছে, অথবা তাকে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। আগামী দিনে বাংলাকে চার ভাগ করা হতে পারে, ওড়িশাকেও ভাগাভাগি করে নেওয়া হতে পারে। এমনকী তাকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলও করে দেওয়া হতে পারে। আমরা দেখলাম, সংসদকেই আসলে মস্করার জায়গা তৈরি করে ফেলা হল, বলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। কাশ্মীরে গ্রেফতার করা হয়েছে সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামিকে। গ্রেফতারির তীব্র বিরোধিতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতায় অনড় সিপিএম সহ বামেরা। কাশ্মীর উপত্যকার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল পিডিপি এবং এনসিও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

Comments are closed.