চোখের সামনে অন্যায় দেখে আদালত চুপ থাকতে পারে না, সিএএ প্রতিবাদীদের হোর্ডিং সরাতে যোগী সরকারকে নির্দেশ হাইকোর্টের

ন্যায় বিচারের জন্যই আদালত। চোখের সামনে অন্যায়-অবিচার হলে কোনও আদালতই চোখ বুজে বসে থাকতে পারে না। সিএএ প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে ছবি সহ ছবি-সহ হোর্ডিং টাঙানোর পরিপ্রেক্ষিতে যোগী সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট।

লখনউয়ের রাস্তা থেকে অবিলম্বে ওই হোর্ডিং সরানোর নির্দেশ এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর এবং বিচারপতি রমেশ সিংহের বেঞ্চের।
গত বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫৩ জন সিএএ প্রতিবাদীর ছবি, নাম, ঠিকানা দিয়ে হোর্ডিং টাঙায় যোগী প্রশাসন। সেই হোর্ডিংয়ে ছিল অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার এস আর দারাপুরি, সমাজকর্মী মহম্মদ শোয়েব, কবি দীপক কবীর, সমাজকর্মী সাদাফ জাফর প্রমুখের ছবি।

রবিবার এই হোর্ডিং টাঙানোকে প্রশাসনের ‘নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড এবং সাধারণ মানুষের গোপনীয়তায় অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুরের বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ১৬ মার্চের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কাছে রিপোর্ট পেশ করতে হবে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষে যুক্তি ছিল, যখন একজন সহায়সম্বলহীন মানুষও আদালতে মামলা করতে পারেন তখন আদালতের এই স্বতঃপ্রণোদিত মামলার যুক্তি কী? যা শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয় বিচারপতির বেঞ্চ। এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায়, ন্যায় বিচারের জন্যই আদালত। চোখের সামনে কেউ অন্যায় ও অবিচার করলে আদালত চোখ বুজে থাকতে পারে না। যেখানে সংবিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেখানে কবে আদালতে মামলা হবে তার জন্য অপেক্ষা করা যায় না। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর বলেন, গোপনীয়তার অধিকার রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং সুপ্রিম কোর্ট স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। এই সব হোর্ডিং টাঙিয়ে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার, স্বাধীনতা নষ্ট করা হয়েছে। এই কাজ ওই ব্যক্তিদের নিজস্ব ক্ষতি ছাড়াও সাংবিধানিক মূল্যবোধে আঘাত। এখানেই থামেননি প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, প্রশাসনের এই নির্লজ্জ কার্যকলাপ প্রবল উদ্বেগের। সরকারের দায়িত্ব জনগণকে সম্মান এবং সৌজন্য দেখানো। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা। কিন্তু এই অগণতান্ত্রিক আচরণ সাংবিধানিক মূল্যবোধে আঘাত করেছে।
উত্তরপ্রদেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীদের বিরুদ্ধে এর আগে আগুন লাগানো, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে জরিমানা চেয়েছিল প্রশাসন। হোর্ডিং দিয়ে অভিযুক্তদের কাছ থেকে সেই জরিমানা আদায় করা হবে বলে জানানো হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ক্ষতিপূরণ আদায় নিয়ে তারা চিন্তিত নয়, তারা উদ্বিগ্ন যে ভাবে নাগরিকের পরিচয় ফাঁস করা হচ্ছে তা দেখে।

Comments are closed.