‘আমার করের টাকা জেএনইউয়ের জন্য খরচ হোক’, অপর্ণা সেন দাঁড়ালেন আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে

জেএনইউ বিবাদে এবার পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ালেন অপর্ণা সেন। ট্যুইট করে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর করলেন change.org পিটিশনে। যে পিটিশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলনের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর পুলিশি নির্যাতনেরও তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এখানে। এভাবে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলেও লেখা হয়েছে পিটিশনে। এখনও পর্যন্ত পিটিশনে সই করেছেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ। change.org-র লক্ষ্য সংখ্যাটিকে ৫ হাজারে নিয়ে যাওয়া। সেখানে অপর্ণা সেনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছাড়াও সই করেছেন বহু সাধারণ মানুষ।
দেশে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা অসহিষ্ণুতার মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে পদক্ষেপের আবেদন জানিয়ে খোলা চিঠি, কখনও সাভারকরকে ভারতরত্নের দাবির বিরোধিতা করে প্রাক্তন প্রসার ভারতী সিইও জহর সরকারের পাশে দাঁড়ানো, আবার কখনও কাশ্মীর। একের পর এক ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন অপর্ণা সেন। তার জন্য অবশ্য বিভিন্ন সময় আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে বর্ষীয়ান অভিনেতা তথা চিত্র পরিচালককে। কিন্তু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আমলে গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নামা অপর্ণা সেন, আক্রমণ-সমালোচনা উঁড়িয়েই ক্ষমতাসীনের চোখে চোখ রেখে কড়া কথা শোনাতে কসুর করেননি। সাম্প্রতিকতম উদাহরণ, জেএনইউয়ের আন্দোলনরত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো।

তবে শুধু পিটিশনে সই করে দায় সারা নয়, সরাসরি ফি বৃদ্ধিরও তীব্র বিরোধিতা করেছেন অপর্ণা। সেই সঙ্গে ট্যুইট করে জানিয়েছেন, তিনি চান তাঁর দেওয়া করের টাকা জেএনইউয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পিছনেই খরচ করা হোক। আর এই ট্যুইটেই সরকার মোক্ষম প্যাঁচে পড়েছে বলে মনে করছেন জেএনইউয়ের আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, জেএনইউ কিংবা অন্যান্য প্রথম শ্রেণির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করদাতাদের টাকার অপচয় হচ্ছে, এই স্লোগান তুলে আন্দোলনকারীদের জনবিচ্ছিন্ন করা এবং সাধারণ মানুষকে আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতির জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল বেশ কিছুদিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি। জেএনইউ কিংবা যাদবপুরকে দেশদ্রোহীদের ঘাঁটি বলে বারবার দাবি করেন বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু হ্যাশট্যাগ ট্যাক্স পেয়ারস উইথ জেএনইউ দিয়ে অপর্ণার এই ট্যুইট আসলে সেই সরকারি ধারণাকেই নস্যাৎ করছে। ফলে করদাতাদের টাকায় চলা জেএইউ কিংবা দেশের অন্যান্য যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই প্রথম ধাক্কা খেয়েছে সরকারের করদাতাদের অর্থের অপচয়ের কৌশল। যা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় বলে মনে করছেন সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা।

তবে অপর্ণা সেনই শুধু নন, জেএনইউয়ের প্রাক্তনী তথা বলিউড তারকা স্বরা ভাস্করও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়রদের পুলিশের হাতে নিগৃহীত হতে দেখে চুপ থাকতে পারেননি। তীব্র নিন্দার পাশাপাশি একাধিক ট্যুইট করেছেন পড়ুয়াদের দাবির স্বপক্ষে।

স্বরা ট্যুইটেই জানিয়েছেন, তিনি গর্বিত যে তাঁর কষ্টার্জিত অর্থ থেকে দেওয়া করের টাকায় জেএনইউয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সস্তায় সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা পান। ফি কমানোর দাবিতে পড়ুয়াদের দাবির পাশে দাঁড়িয়ে স্বরার দাবি, জেএনইউতে ফি বৃদ্ধি হলে ৪৩ শতাংশ পড়ুয়াকেই উচ্চশিক্ষা অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসতে হবে।

Comments are closed.