সোনালী চতুর্ভূজের রূপকার অটল বিহারী বাজপেয়ীর জীবনাবসান

জীবনাবসান হল দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর। গত প্রায় দুমাস ধরে ভর্তি ছিলেন দিল্লির এইমসে। বুধবার সন্ধ্যার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। খবর পেয়েই হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় ৪০ মিনিট ছিলেন হাসপাতালে তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এবং লালকৃষ্ণ আদবানিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা যেতে শুরু করেন হাসপাতালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন দুপুরেই দিল্লি রওনা দেন বাজপেয়ীর গুরুতর অসুস্থতার খবর পেয়ে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
১৯৯৬ সালে প্রথম ১৩ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তারপর ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে আরও দু’বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাজপেয়ী। তিনিই প্রথম অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী, যিনি টানা পাঁচ বছর সরকার চালান। বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক দলকে সঙ্গী করে দক্ষতার সঙ্গে এনডিএ সরকার চালিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাজপেয়ীকে ভারতরত্ন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
১৯২৪ সালে গ্বালিয়রে জন্মগ্রহণ করা অটল বিহারী বাজপেয়ীর রাজনৈতিক জীবন পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের। ১৯৪২ সাল নাগাদ রাজনীতিতে যোগদান করেন তিনি। তারপর থেকে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা সময়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেফতারও হন। মোরারজি দেশাই সরকারে বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তিনি ছিলেন ১৯৮০ সালে বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১০ বার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন দু’বারের।
কয়েক বছর ধরেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি বাড়িতেই বন্দি ছিলেন। দু’মাস আগে এইমসে ভর্তি হন তিনি। বুধবার বিকেল থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এইমসে যেতে শুরু করেন। বুধবার রাতেই এইমসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়েছে তাঁকে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তে এদিন সকালে বহু সাধারণ মানুষও এইমসের সামনে পৌঁছে যান। এদিন দুপুরে ফের এইমসে পৌঁছোন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত বর্ণময় চরিত্র ছিলেন বাজপেয়ী। লোকসভায় তাঁর বহু ভাষণ ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে বহুদিন। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ই ঘটে একের পর এক বড় ঘটনা। পরীক্ষামূলকভাবে পরমাণু বিস্ফোরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী। তাঁর সময়েই কার্গিল যুদ্ধ, আবার সংসদেও আক্রমণের ঘটনা ঘটে তাঁর প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়। সোনালী চতুর্ভূজ রাস্তার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী, যা দেশের অর্থনীতি এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনাও শুরু করেছিলন তিনি, যা গ্রামীণ অবস্থার আমূল পরিবর্তন করে। বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা সম্ভবত ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা, যে ঘটনার জন্য দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনাও করেছিলেন। ২০০৪ সালে বাজপেয়ীকে প্রধান মুখ করেই ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ স্লোগানকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে লড়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই নির্বাচনে পরাজয় হয় বিজেপির। গঠিত হয় ইউপিএ সরকার। ২০০৫ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন বাজপেয়ী।

Comments are closed.