মনিপুরের কৃষক সন্তান বিদ্যাসাগরের ফুটবল শেখা গ্রামের ‘দিদির’ কাছে, ইস্টবেঙ্গলের নতুন তারকাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ময়দান

গত মরসুমে ভারতীয় ফুটবলে এক নতুন তারকার জন্ম দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। জবি জাস্টিন। কেরালার এই স্ট্রাইকার গত আই লিগে দারুণ নজর কেড়েছিলেন। এবার আইএসএল-এর দল এটিকেতে সই করেছেন জবি। এবার কি সেই লাল হলুদ জার্সিতেই এক তরুণ ফুটবলারকে ভারতীয় ফুটবলের তারকা হতে দেখবে ময়দান? যদিও মাত্র কয়েকটি ম্যাচ হয়েছে। তবু বছর কুড়ির মনিপুরী বিদ্যাসাগর সিংহকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। ডুরান্ড কাপের তিনটি ম্যাচে পাঁচটি গোল করে ফেলেছেন বিদ্যাসাগর। দুটি ম্যাচে পরে নেমে খেলার রং বদলে দিয়েছেন। যত দিন যাচ্ছে, তিনি হয়ে উঠছেন ইস্টবেঙ্গলের ‘সুপারসাব’।
জানেন কি, বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে এক অদ্ভুত তথ্য? ইস্টবেঙ্গলের এই তরুণ ফুটবলারের ফুটবলের প্রথম পাঠ তাঁর গ্রামের এক ‘দিদির’ কাছে। না, তিনি অবশ্য সাধারণ কেউ নন। বিদ্যাসাগরের প্রথম ফুটবল কোচ এই ‘দিদি’ হলেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রাক্তন ফুটবলার পরমেশ্বরী দেবী।

মনিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরের গ্রাম সামারাম মায়াই লেইকাই। সেখানেই পরমেশ্বরী দেবীর কাছে গ্রামের বাকি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ফুটবল খেলা শুরু বিদ্যাসাগরের। তাঁর প্রথম ক্লাব ট্রাউ এফসি। তখন সদ্য শুরু হয়েছে ইস্টবেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি। অ্যাকাডেমির ফুটবলার বাছতে মনিপুরে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছিলেন কোচ রঞ্জন চৌধুরী। টিএফএ এর কোচ হিসেবে ভারতীয় ফুটবলে একশোর বেশি ফুটবলার সাপ্লাই দিয়েছেন রঞ্জন চৌধুরী। তিনিই তুলে এনেছিলেন বিদ্যাসাগরকে। তারপর অ্যাকাডেমি দলের হয়ে বেশ নজর কাড়েন। সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা দলের হয়েও বেশ ভালো খেলেন। গত বছর থেকেই সিনিয়র দলে তাঁকে মাঝেমধ্যে ব্যবহার করছেন স্প্যানিশ কোচ আলেজান্দ্রো। কিন্তু বিদেশি স্ট্রাইকার এবং জবি জাস্টিনের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। এ বছর তিনি যেন আরও ধারালো। বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর গতি। আলেজান্দ্রো নিজেই বলছেন, ‘ওর সব থেকে বড় গুণ দুটো। প্রথমত, ওর গতি। আর দ্বিতীয়ত, সব সময় বিপক্ষ গোলের দিকে দৃষ্টি রেখে আক্রমণ করা। দুটো সামলাতে বিপক্ষ রক্ষণভাগকে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে ওর এখনও অনেক অভিজ্ঞতা লাগবে।’ সেই অভিজ্ঞতা যদি সঞ্চয় করতে পারেন বিদ্যাসাগর, তাহলে এই মরসুমে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণভাগের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠবেন তিনি।
বিদ্যাসাগর এখনও পা মাটিতেই রেখেছেন। কৃষক পরিবারের এই সন্তান, এখনও বাড়ি গেলে বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করেন। ম্যাচের পর ম্যাচ গোল করেও, কথা বলেন ঠিক যতটুকু প্রয়োজন। তারকা হওয়ার সব উপকরণই মজুদ আছে। প্রয়োজন শুধু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের।

Comments are closed.