গরম বাড়লে করোনার তাণ্ডব কমতে পারে, কিন্তু থামবে না, মত এমআইটি-র গবেষকদের

তাপমাত্রা বাড়লে করোনা সংক্রমণ কম হতে পারে, কিন্তু বিলীন হবে না, এমনটাই দাবি করলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনলোজির (MIT) বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।

তাপমাত্রার সঙ্গে কি আদৌ কোনও সম্পর্ক আছে কোভিড-১৯ সংক্রমণের?  করোনা সংক্রমণে বিধ্বস্ত সারা বিশ্ব। লকডাউন শুরু হওয়ার পর অনেকেই আশা করছেন, তাপমাত্রা বাড়লে এই দুর্দিন কাটবে, ছড়াতে পারবে না করোনাভাইরাস। যেমনটা মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু উষ্ণতার সঙ্গে করোনার সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের বিভিন্ন মত রয়েছে।

সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একদল গবেষক নয়া গবেষণায় জানিয়েছেন, তাপমাত্রা বাড়লে করোনার সংক্রমণ কমতে পারে ঠিকই, কিন্তু তাতে সংক্রমণ সম্পূর্ণভাবে রোধ হতে পারে না। এমআইটি-র গবেষণা বলছে, ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে করোনার সংক্রমণ যতটা দ্রুত হয়, তার উপরের তাপমাত্রায় একেবারে বন্ধ না হলেও সংক্রমণ মাত্রা অনেকখানি কমে।

এমআইটি- র বিজ্ঞানী কাসিম বুখারি জানান, যেখানে আবহাওয়া বেশি ঠান্ডা, সেখানে কোভিড-১৯ ছড়ানোর হার অপেক্ষাকৃত দ্রুত। ইউরোপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সেখানকার দেশগুলিতে কীভাবে দ্রুত ছড়িয়েছে করোনা। আমেরিকার ক্ষেত্রেও তাপমাত্রার হেরফেরেই সংক্রমণ মাত্রার হেরফের হয়েছে বলে জানান ডাঃ বুখারি। তিনি বলেন, একই সময়ে আমেরিকার ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, কলোরাডোর থেকে আরিজোনা, ফ্লোরিডা, টেক্সাসে করোনা সংক্রমণ কম হয় উষ্ণতার পার্থক্যের জন্যই।

ঠিক একই রকম দাবি করেছেন স্পেন ও ফিনল্যান্ডের একদল গবেষক। তাঁদের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে সক্রিয় থাকে করোনাভাইরাস। তাঁদের দাবি, করোনা ছড়ানোর পর যে সময় চিনা সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছিল, তখন উষ্ণতার কারণে এমনিতেই কিছু শহরে সংক্রমণের মাত্রা কমে গিয়েছিল।

তবে এমআইটি-র বিজ্ঞানী ডাঃ বুখারি ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এও মেনে নেন, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল ও নমুনা পরীক্ষার পরিকাঠামো অবশ্যই করোনা সংক্রমণ হারের তারতম্য তৈরি করে। তবে তাপমাত্রাও যে একটা অন্যতম কারণ তা জানিয়ে তিনি বলেন, উষ্ণ তাপমাত্রায় এই ভাইরাস কম ছড়ায় বটে, কিন্তু সংক্রমণ একেবারে বন্ধ করে দিতে পারে না। উচ্চ তাপমাত্রায় বাতাস বা সার্ফেসে দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে না করোনাভাইরাস।

ডাঃ বুখারি জানান, বিভিন্ন মরসুমি ভাইরাস যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কম তাপমাত্রায় বিশেষ সক্রিয় হয়, মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে, গরম পড়লে কিন্তু তাদের সক্রিয়তা কমে। আবার সক্রিয়তা কমলেও গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভাইরাস যে অদৃশ্য হয়ে যায় তাও নয়। তারা টিকে থাকে, একটা সুবিধাজনক অবস্থা, তাপমাত্রা পেলে ফের সংক্রমণ বাড়ায়। করোনার প্রকৃতিও তেমনি। ডাঃ বুখারি জানান, সব ভাইরাস যে তাপমাত্রা বাড়লে কম সংক্রামিত হতে পারে এমনটা মোটেও নয়। যেমন পোলিয়ো ভাইরাস আবার উষ্ণ তাপমাত্রায় বেশি ছড়ায়।

তাপমাত্রার সঙ্গে করোনার সম্পর্কের সুস্পষ্ট ছবি তুলে ধরতে তাঁদের আরও চার থেকে ছ’ সপ্তাহ দিতে হবে বলে জানান প্যান আমেরিকা হেলথ অর্গানাইজেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জারবাস বার্বোসা। সব মিলিয়ে উষ্ণতার উপর করোনা সংক্রমণ নির্ভর করে কি না তা নিয়ে বিতর্ক ও গবেষণা জারি রয়েছে।

Comments are closed.