Delhi Election 2020: কেন্দ্রে মজবুত সরকার থাকলেই কি দিল্লি বিধানসভা দখল করা যায়? কী বলছে গত ২৫ বছরের ইতিহাস?

রাত পোহালেই দিল্লির ভোটের ফল। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আম আদমি পার্টি কি পারবে গতবারের পারফর্মেন্স ধরে রাখতে? নাকি অমিত শাহের ঝড় তোলা প্রচারের কাঁধে ভর করে দিল্লি পুনর্দখল করবে বিজেপি? কংগ্রেসের ফল কেমন হবে? আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাফ হবে সমস্ত জল্পনা।
কিন্তু অতীতে দিল্লিতে ভোটের ফলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের কী সম্পর্ক? যাঁরা দিল্লিতে বসে দেশ শাসন করেন, দিল্লি বিধানসভায় সেই দলের ফল কেমন? কী বলছে দিল্লিতে ভোটিং ট্রেন্ড?
১৯৯৩ সাল থেকে ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ভোট শুরু হয়। এর আগে দিল্লিতে কখনও ৫৬ টি আসন আবার কখনও ৪৮ আসনে ভোট হয়। ১৯৯৩ সাল থেকেই প্রথম ৭০ আসনের ভোট শুরু।
এবার আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, ১৯৯৩ সাল থেকে কাকে ভোট দিয়েছিলেন রাজধানীর বাসিন্দারা?

১৯৯৩ সালের বিধানসভা ভোটে আপের জন্ম হয়নি। সেসময় কংগ্রেসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিজেপি। সেবার কংগ্রেস পায় মাত্র ১৪ টি আসন, ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে যায় ৪৯ টি আসন। সরকার গড়ে বিজেপি, মুখ্যমন্ত্রী হন মদনলাল খুরানা। সরকারের দ্বিতীয় অর্ধে অবশ্য বিজেপিকে মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে হয়। ১৯৯৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন সাহেব সিংহ ভার্মা। ১৯৯৮ সালে ভোটের ঠিক মুখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন সুষমা স্বরাজ।

দেশে সেই সময় নরসিংহ রাও সরকার। কিন্তু দিল্লিতে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। ১৯৯১ সালে দিল্লির ৭ লোকসভা আসনে বিজেপি দখল করেছিল ৫ টি আসন। কংগ্রেসের দখলে গিয়েছিল মাত্র ২ টি লোকসভা আসন।
১৯৯৮ সালের ভোটে কিন্তু বাউন্স ব্যাক করে কংগ্রেস। হাতের দাপটে কার্যত উড়ে যায় পদ্মফুল। কংগ্রেস একা দখল করে ৭০ আসনের মধ্যে ৫২ টি। বিজেপি পায় মাত্র ১৫ আসন, মুখ্যমন্ত্রী হন শীলা দীক্ষিত।


সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম অটল বিহারী বাজপেয়ী। ক্ষমতায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। ১৯৯৬ সালের লোকসভা ভোটে দিল্লিতে বিজেপি পেয়েছিল ৫ টি আসন, কংগ্রেস ২ টি। একইভাবে ১৯৯৮ সালের লোকসভা ভোটেও বিজেপি দিল্লিতে পায় ৬ টি আসন, একটি পায় কংগ্রেস। ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি একাই দিল্লির ৭ টি আসন দখল করে। কংগ্রেসের হাত খালি।
২০০৩ সালের ভোটে দিল্লিতে কংগ্রেসের জয়জয়কার। মোট ৭০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস একাই দখল করে ৪৭ টি আসন। বিজেপি থামে ২০ আসনে। দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের দাপুটে নেত্রী শীলা দীক্ষিত।


এই সময় প্রথম দিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু ২০০৪ সালের মে মাসে লোকসভা ভোটে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ডক্টর মনমোহন সিংহ। তারপর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনিই নিরবিচ্ছিন্নভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ এক ও দুই সরকার।
২০০৮ সালের ভোটেও দিল্লি মাত হয় শীলার জাদুতে। সেবারও ৪৩ টি আসন নিয়ে কংগ্রেস সহজেই সরকার গড়ে। বিজেপিকে থামতে হয় ২৩ আসনে। মুখ্যমন্ত্রী পদে ফের শীলা দীক্ষিত। সেই সময় দিল্লি এবং কেন্দ্র, দুই জায়গাতেই ক্ষমতায় কংগ্রেস।


২০১৩ সালের ভোটে দিল্লিতে ঘটে একটি বিরাট পরিবর্তন। আসরে নামে আম আদমি পার্টি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হওয়া ভোটে বদলে যায় এতদিনের সমস্ত সমীকরণ। এতদিন দিল্লি শাসন করা কংগ্রেস মুখ থুবড়ে পড়ে মাত্র ৮ টি আসন নিয়ে। অন্যদিকে ২৮ টি আসন জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করে আপ। বিজেপিকে থামতে হয় ৩১ আসনে। কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিল্লিতে তৈরি হয় আপ সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন খড়গপুর আইআইটির প্রাক্তনী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।


কিন্তু সেই সরকার বেশিদিন টেকেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে গোলমালে সরকার ভেঙে যায়। দিল্লিতে জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। তার মধ্যে লোকসভা ভোট হয়েছে ২০১৪ সালে। তাতে দিল্লির ৭ টি আসনই দখল করে বিজেপি। দেশের প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী। এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে ফের বিধানসভা ভোটে যায় দিল্লি।
২০১৫ সালের ভোটে আসে অবিশ্বাস্য ফলাফল। এই প্রথম রাজধানী দিল্লির বুক থেকে মুছে যায় কংগ্রেস। মাত্র ৩ আসনে জিতে কোনওরকমে অস্তিত্ব রক্ষা করে ভারতীয় জনতা পার্টি। একা ৬৭ টি আসন দখল করে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি।


এরপর হয়ে গিয়েছে ২০১৯ সালের হাই-ভোল্টেজ লোকসভা ভোট। তাতে বিপুল আসন জিতে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ডেপুটি হয়েছেন অমিত শাহ।
২০২০ সালে ফের একবার ভোটে নেমেছে দিল্লি। ৭০ আসনের বিধানসভার লড়াইয়ে এবার কী আপের সামনে দাঁড়াতে পারবে বিজেপি? নাকি ৫ বছর আগের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ফের দিল্লি দখলে রাখবে আপ?

Comments are closed.