ত্রিপুরার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরএসএস শীর্ষ নেতার সংঘাত ঘিরে জল্পনা, উদ্বিগ্ন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব
২০ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ত্রিপুরার মসনদ দখল করেছে বিজেপি। দলের তরফে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে তরুণ মুখ বিপ্লব দেবকে। তবে অনেকেই মনে করেন, ত্রিপুরায় কাস্তে হাতুড়িকে উড়িয়ে দিয়ে পদ্ম ফোঁটানোর মূল কারিগরটির নাম সুনীল দেওধর। বিজেপির তরফে উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত, আরএসএসের এই সক্রিয় সদস্যকেই ত্রিপুরা ভোটের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মোদি-অমিত শাহ জুটি। বিপ্লব দেবের সঙ্গে সুনীল দেওধরের হঠাৎ তৈরি হওয়া সংঘাতকে কেন্দ্র করে জল্পনা ত্রিপুরার রাজনীতিতে। ত্রিপুরা জয়ের মূল কাণ্ডারী সুনীল দেওধর হলেও বিপ্লব দেবকেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি নেতৃত্ব।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন বিপ্লব দেব। কখনও ত্রিপুরার বেকার ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরির আশা ছেড়ে পান বিক্রির বা গরুর দুধ দোয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কখনও বা মহাভারতের যুগেও ইন্টারনেট ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, সম্প্রতি ত্রিপুরা বিজেপির এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে শুরু হয়েছে ক্ষমতার লড়াই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিপুরা বিজেপির এক নেতা জানিয়েছেন, ৪৭ বছরের বিপ্লব দেবকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী করা হোক, প্রথম থেকেই তা চাননি সুনীল দেওধর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর পছন্দ ছিলেন কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ। তাই ক্ষমতার সিংহাসনে বসে এখন বিপ্লব দেব চাইছেন দলের মধ্যে থাকা তাঁর বিরোধীদের বেগ দিয়ে কোণঠাসা করতে। প্রশাসন আর দলের ক্ষমতা নিজের দখলে আনতে। আর সুনীল দেওধর চাইছেন ত্রিপুরার শেষ কথা হয়ে উঠতে।
বিপ্লব-সুনীলের এই লড়াই নতুন মাত্রা পেয়েছে বিপ্লব দেবের সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্যে। সূ্ত্রের খবর, বিজেপি শীর্ষ নেতৃ্ত্বকে লেখা এক চিঠিতে বিপ্লব দেব অভিযোগ করেছেন, দলের তরফে ত্রিপুরার দায়িত্বে থাকা সুনীল দেওধর নাকি তাঁর ফেসবুকে পেজে বিপ্লবকে কটাক্ষ করে লেখা বেশ কিছু মন্তব্যে ‘লাইক’ করেছেন। চিঠিতে বিপ্লবের আরও অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন বলে মিথ্যা প্রচার করছেন সুনীল দেওধর ঘনিষ্ঠরা।
গত মাসে ত্রিপুরা বিজেপির রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে সুনীল দেওধরের অনুপস্থিতি বিপ্লব-সুনীল সংঘাতের জল্পনায় আরও ঘি ঢেলেছে। মঙ্গলবার আগরতলার এক কর্মীসভাতেও যোগ দেননি দেওধর। এবিষয়ে জানতে চেয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। যদিও বিপ্লব দেবের সঙ্গে তাঁর দূরত্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন সুনীল দেওধর। তিনি বলেন, তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল ত্রিপুরায় বিজেপিকে জেতানো। এর জন্য তিনি দু’বছর ধরে ত্রিপুরায় ঘাঁটি গেড়ে পড়েছিলেন। তাঁর সেই লক্ষ্য সফল হয়েছে। তাঁর কাজও শেষ হয়েছে। এখন তিনি দলের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত আছেন। তাঁর দাবি, আগ্রায় আরএসএসের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ায় তিনি আগরতলার কর্মীসভায় যোগ দিতে পারবেন না বলে দলকে আগেই জানিয়েছিলেন। ফেসবুক বিতর্ক প্রসঙ্গে সুনীল দেওধর জানিয়েছেন, তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তিনি নিজে হ্যান্ডেল করেন না। বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধেও তিনি কোনও পোস্ট করেননি।