ব্যাপক সাড়া ‘দুয়ারে সরকার’-এ, ভোটে প্রভাব কতখানি? আশায় বুক বাঁধছে তৃণমূল শিবির

দুয়ারে সরকার কর্মসূচির প্রভাব বিধানসভা ভোটে থাকবে?

বিধানসভা ভোটের আগে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সমালোচনা, কটাক্ষ করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাই কর্মসূচির ৫৩ দিনের মধ্যেই ২ কোটি ৩৯ লক্ষ মানুষ পদার্পণ করেছেন ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে। এই উৎসাহ লক্ষ্য করেই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে মমতা সরকার। এই প্রেক্ষিতে যে প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে ঘুরছে তা হল, সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচনে কতটা দাগ কাটতে পারবে তৃণমূল?

সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ যে তিন জেলায় ভিড় করেছেন, সেগুলি হল রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় তিনটি জেলা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা।

সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ, শুধু শুক্রবার মুর্শিদাবাদ জেলার ৬২টি সরকারি শিবিরে ভিড় করেছেন ৩৩ হাজার ১০৫ জন মানুষ। আর ডিসেম্বর থেকে এপর্যন্ত ২২ লক্ষ ১৮ হাজার ৯৭২ জন মানুষের পদার্পণ ঘটেছে মুর্শিদাবাদের সরকারি ক্যাম্পগুলিতে।

‘১৯ লোকসভার ভোটে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের। কংগ্রেসের আবু হেনা ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে রানার আপ হন। আর বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় স্থানে থাকা হুমায়ুন কবির কয়েক মাস আগেই আবার তৃণমূলে ফিরেছেন। তবে বিধানসভা ভোটের মুখে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল নেতৃত্বের গোষ্ঠী কোন্দলই ভাবাচ্ছে মমতা ব্যানার্জিকে। তাই সদ্যই জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটে লড়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। মুর্শিদাবাদের ২২টির ২২ টি আসনই যে তাঁর লক্ষ্য তা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন আবু তাহের খান, খলিলুর রহমান, মন্ত্রী জাকির হোসেনদের। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল সরকারের দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে মানুষের ব্যাপক উৎসাহ আলাদা ভাবে চাঙ্গা রাখছে তৃণমূল নেতৃত্বকে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ১০০ শিবিরে এ পর্যন্ত ১৯ লক্ষ ২৪ হাজার ৪২৮ জন মানুষের পদার্পণ ঘটেছে। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ১১১ শিবিরে ভিড় করেছেন মোট ১৯ লক্ষ ৯ হাজার ৪৮২ জনের। গত লোকসভা ভোটে এই দুই জেলায় কেমন ফল ছিল তৃণমূলের?

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত উত্তর ২৪ পরগনায় প্রায় ২৬ শতাংশ মুসলিমের বাস। জেলার ৩৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল ২১টিতে ও বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ১২টিতে। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলায় তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য বলা চলে। জেলার ৩১টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই ১৯-এর লোকসভা ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এই প্রেক্ষাপটে দুই জেলায় মমতার সরকারের কর্মসূচি ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে উৎসাহ শাসক দলকে এগিয়েই রাখছে আসন্ন ভোটের লড়াইয়ে।

এই তিনটি জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলাতেও প্রবল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে এই সরকারি কর্মসূচি ঘিরে। স্বাস্থ্যসাথী সহ ১১ টি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে প্রতিদিনই মানুষের ঢল নামছে শিবিরগুলিতে। যা ভোটের আগে বাড়তি অক্সিজেন যোগাচ্ছে তৃণমূলকে।

Comments are closed.