এবার দেবীর আগমন পালকিতে, গমন গজে, এর কী তাৎপর্য? কেমন যাবে আগামী দিন, শাস্ত্র কী বলছে?

প্রতি বছর দুর্গা পুজোর সময় আমরা শুনে থাকি এবার মায়ের আগমন নৌকা, ঘোড়া, গজ, পালকি কিংবা দোলায় চড়ে। আবার এগুলোতে চড়ে মায়ের গমনের কথাও শোনা যায়। এবারে মা কীসে আসছেন, গমনই বা কীসে? এর ফলাফল কী? জানেন, কী বলছে শাস্ত্র?

 

দেবী দুর্গার আগমন আর গমনের পৃথক পৃথক যানবাহনের উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। পৃথক এই যানবাহনের সঙ্গে ফলাফলেরও উল্লেখ থাকে। দেবী কোন যানে কৈলাস থেকে মর্ত্যধামে আসছেন, আর কোন যানবাহনে করে মর্ত্য থেকে কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে মর্ত্যবাসীর জীবন কেমন হবে।

 

এবছর দেবীর আগমন হয়েছে দোলা অর্থাৎ, পালকিতে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, দোলায় আগমনের ফল ‘মড়ক’। অর্থাৎ, মহামারি।

ইতিমধ্যে অতিমারি করোনায় বিধ্বস্ত সারা বিশ্ব। সংক্রমণের চোখরাঙানি এড়িয়ে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় ও বিধিনিষেধ মেনে এবার বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব পালিত হচ্ছে। কিন্তু পঞ্জিকা অনুযায়ী, দেবীর আগমনের ফল হিসেবে ‘মড়ক’, মহামারি ও দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি দেখা দেবে!

এবার দেবীর গমন হবে গজে। গজে গমনের ফল হল ‘শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা’। অর্থাৎ, দেবী মর্ত্যধাম ছেড়ে কৈলাস যাওয়ার পর শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে পৃথিবী। তাই দেবীর গজে আগমন বা গমনকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।

কোন বছর কোন যানে দেবীর আগমন ও গমন ঘটছে তার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। আছে তার বিশেষ ফলাফলও

 

দোলা: দোলা অর্থাৎ, পালকি হল মহামারি বা মড়কের প্রতীক।

 

নৌকা: নৌকা বন্যার প্রতীক। বন্যা একদিকে যেমন খারাপ, অন্যদিকে ভালো ফসল হওয়াকেও ইঙ্গিত করে।

 

গজ: গজ বা হাতি হল শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক।

 

ঘোটক: ঘোটক বা ঘোড়া ছত্রভঙ্গের প্রতীক। অর্থাৎ, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির এলোমেলো হয়ে যাওয়াকে বোঝায় ঘটকের আগমন বা গমনের দ্বারা। যুদ্ধ-বিদ্রোহ, বিপ্লব ইত্যাদির সংকেত হল ঘোটক।

 

আবার কোনও বছর দেবীর আগমন ও গমন যদি একই যানে হয়, তার পরের বছরটা ভীষণ খারাপ যায় মর্ত্যবাসীর।

এ বিষয়ে শাস্ত্রীয় পণ্ডিতরা বলছেন, গত বছর দেবীর আগমন আর গমন একই যানে ঘটেছিল আর তার ফল হিসেবে করোনা মহামারির কোপে পড়ল বিশ্ববাসী।

 

কীসের ভিত্তিতে বোঝা যায় দেবীর কোন যানে আগমন ও গমন হবে?

 

শাস্ত্রমতে, মা দুর্গার সপ্তমীর দিনে আগমন যদি রবিবার বা সোমবার পড়ে তবে বুঝে নিতে হবে তাঁর আগমন হচ্ছে গজে বা  হাতিতে। তাহলে পৃথিবী শস্যপূর্ণ হয়। অর্থাৎ, পৃথিবীর জন্য ভালো।

বিসর্জনের দিন যদি রবিবার বা সোমবার হয় তাহলেও মায়ের গমন হয় হাতিতে। সে ক্ষেত্রেও ফল একই।

মায়ের আগমন বা গমন যদি শনিবার বা মঙ্গলবারে হয় তাহলে মায়ের যান হয় ঘোড়া। এর ফল হয় ‘ছত্রভঙ্গ’।

বুধবার যদি সপ্তমী পড়ে তবে মায়ের আগমন বোঝায় নৌকায়। বুধবার দশমী হলেও মায়ের গমনের যান সেই নৌকাই। সেক্ষেত্রে ফলস্বরূপ শস্য বৃদ্ধি ও বন্যা হয়।

দুর্গা সপ্তমী যদি বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার পড়ে তাহলে মায়ের দোলায় আগমন বোঝায়। এবং দশমী যদি বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার পড়ে তাহলে মায়ের দোলায় গমন। এর ফল মড়ক। সেক্ষেত্রে বেশি মৃত্যু ঘটতে দেখা যায়।

এই বছর ২৩ অক্টোবর শুক্রবার সপ্তমী পড়েছে। তাই দুর্গার আগমন দোলা বা পালকিতে। ২৬ অক্টোবর সোমবার পড়েছে বিজয়া দশমী। দুর্গা পুত্র-কন্যাসহ কৈলাশে ফিরবেন গজ অর্থাৎ, হাতির পিঠে চেপে।

অনেকে এসব বিশ্বাস করেন আবার অনেকেই করেন না। তবে শাস্ত্র ও পঞ্জিকাতে এমনটাই বলা আছে।

 

 

 

 

Comments are closed.