মন্দার ধাক্কা দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়, প্রথম ৬ মাসে অন-লাইন ব্যবসায় প্রায় ২৭ শতাংশ বিক্রি কমেছে

দেশে চলতি আর্থিক মন্দার সরাসরি প্রভাব পড়েছে গাড়ি শিল্পে। সামান্য বিস্কুট থেকে সোনা, বিক্রি কমেছে প্রায় সমস্ত সামগ্রীর। পরিস্থিতি এমনই, বিক্রি হচ্ছে না অন্তর্বাসও। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে জানা গেল, ভাঁটার টান মোবাইল ফোন থেকে ব্র্যান্ডেড পোশাক বিক্রিতেও। সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আগের বছরের তুলনায় অন-লাইন বিক্রি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
সোমবার দ্য ইকনমিক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন। যেখানে মার্কেট রিসার্চ ফার্ম কেন্টারের একটি রিপোর্টকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, মন্দার কবলে এসে পড়েছে অনলাইন ই-কমার্স ব্যবসাও। গত বছরের প্রথম অর্ধের তুলনায়, ২০১৯ এর প্রথম ৬ মাসে সামগ্রিক কেনাবেচা পড়েছে ২৭ শতাংশ। গড় খরচের পরিমাণেও নেমেছে ধস। গতবারের তুলনায় তা কমেছে ২১ শতাংশ।
কিন্তু রিসেশন প্রুফ বলে দাবি করে ভারতে ব্যবসায় নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়া অ্যামাজন-ফ্লিপকার্টের ব্যবসায় হোঁচট কেন? কেন্টার বলছে, সমস্যা মূলত দ্বিমুখী। প্রথমত ই-কমার্স সংস্থাগুলো ছাড়ের পরিমাণ লক্ষণীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, অর্থনীতিতে সামগ্রিক মন্দার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ই-কমার্স সংস্থাগুলো ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্টারের যুক্তি, ভারতের উৎসবের মরসুমে বিক্রি বাড়বে।
ফ্যাশন কিংবা হাল মডেলের মোবাইল ফোন। সাধারণ ভারতীয়ের পছন্দের তালিকায় থাকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোই। কিন্তু মন্দা এবং ছাড়হীন বিক্রির জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল এই সামগ্রী বিক্রিও। ইকনমিক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কেন্টারের রিপোর্ট বলছে, অনলাইনে মোবাইল ফোনের বিক্রি কমেছে ১৭ শতাংশ। পাশাপাশি, জামা-কাপড়ের বিক্রিও কমেছে ১৬ শতাংশ। এই ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে অ্যামাজন এবং ফ্লিপকার্ট।
গত মাসে ইকনমিক টাইমসেই প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, উৎসবের মরসুমে এই বিক্রি ২৫-২৭ শতাংশ অবধি বাড়তে পারে। গতবার ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। অর্থাৎ, মন্দার প্রভাবে উৎসবের মরসুমেও বিক্রি কমবে। ন্যাসকমের হিসেবে, ২০১৮-১৯ সালে ভারতীয় ই-কমার্স বাজার ছিল ৩৮.৫ বিলিয়ন ডলারের। ২০১৭-১৮ তে যা ছিল ৩৩ বিলিয়ন। অর্থাৎ ব্যবসা বাড়লেও, বৃদ্ধির গতি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে শিল্প মহলের। কার্যত একই পরিস্থিতি দেশের গাড়ি শিল্পে। চিরাচরিত গাড়ি ব্যবসায় সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন শিল্পপতিরা
স্টার্টআপে বিনিয়োগকারী স্ট্যানফোর্ড এঞ্জেলসের প্রতিষ্ঠাতা পলা মারিওয়ালার দাবি, ভারতের তরুণ প্রজন্মের ক্রেতার সিংহভাগের কাছে রয়েছে প্রিমিয়াম মডেলের স্মার্ট ফোন, হাল ফ্যাশনের জামা-কাপড়। ফোন কিংবা দামি পোশাকের জন্য দেশের তরুণ প্রজন্ম নির্ভর করে ইএমআই (ইক্যুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্টস) এর উপর। কিন্তু সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কগুলো ঋণ দিতে চাইছে না। ফলে তরুণ প্রজন্মের মোবাইল ফোন কিংবা কেতাদুরস্ত পোশাক কেনাতেও লাগাম পড়েছে।
আবার অনলাইন বিক্রি কমার নেপথ্যে আরও একটি কারণের কথা উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তা হলে, বিপুল ছাড় দিয়ে বাজার দখল করা অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ইতিমধ্যেই ছাড়ের পরিমাণ কমাতে শুরু করেছে। তাতে উৎসাহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিকে দেশের অর্থনীতির মন্দা ইন্ধন যুগিয়েছে বলে মন্দা মনে করছেন তাঁরা।
তবে বিক্রি কমার কথা স্বীকার করেনি অ্যামাজন ইন্ডিয়া বা ওয়ালমার্টের ফ্লিপকার্ট। তাদের দাবি, ফোন কেনার হার ক্রমেই বাড়ছে। দেদারে বিকোচ্ছে পোশাকও।
এই দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যে একমাত্র সুসংবাদ এফএমসিজি ক্ষেত্রে। অনলাইন মুদিখানার বিক্রিবাট্টাতে পতন তো দূরের কথা, বরং শক্তিশালী বৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। কেন্টারের রিপোর্ট বলছে, এই প্রবণতা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রিতে প্রভাব নেই কিন্তু মোবাইল কিংবা কেতাদুরস্ত পোশাকের বিক্রিতে ভাঁটার টান।

Comments are closed.