তীব্র হচ্ছে ভারত-চিন দ্বন্দ্ব। দেশজুড়ে উঠছে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক। এই পরিস্থিতিতে চিন থেকে আমদানিকৃত জিনিসে শুল্ক বৃদ্ধি এবং ৩০০ টির বেশি পণ্যের উপর ব্যবসায়িক বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা নিচ্ছে ভারত। সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে এমনটাই দাবি করছে ইংরেজি দৈনিক ইকনমিক টাইমস।
পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চিনের সেনা সংঘর্ষের মধ্যে তীব্র হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব। যার আবশ্যিক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনেও। সরকারের দুটি পৃথক সূত্র থেকে ইকনমিক টাইমস জানাচ্ছে, চিন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিকৃত ৩০০ টির বেশি পণ্যে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা আনার পরিকল্পনা নিয়েছে মোদী সরকার। এর উদ্দেশ্য হল, চিনকে বৈদেশিক বাণিজ্যে কোণঠাসা করা এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করা।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে ইকনমিক টাইমসের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন বলছে, গত এপ্রিল থেকেই এই বিষয়ে পর্যালোচনা করছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ক্যাম্পেনের উদ্যোগ হিসেবে উঠে এসেছে চিন সহ বিদেশি পণ্যের আমদানিতে রাশ টানা এবং স্বদেশি প্রোডাক্টের ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করা। এই প্রেক্ষিতে নতুন শুল্ক পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সেই কাজ চূড়ান্ত হতে চলেছে বলে খবর। যদিও এই আলোচনায় যুক্ত কেন্দ্রীয় অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রক সরকারিভাবে এ ব্যাপারে এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হয়নি। তবে সরকারি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ১৬০ থেকে ২০০ টি আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক বেড়াজাল তৈরি করা হবে বিদেশি প্রোডাক্টের জন্য।
কী সেই বেড়াজাল? সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ৩০০ টির বেশি বিদেশি পণ্যের লাইসেন্সের শর্ত কড়া করা হবে। আরও কঠিনভাবে বিচার করে দেখা হবে এই সব বিদেশি পণ্যের গুণমাণ। এই পদক্ষেপে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিদেশি পণ্য, যেগুলি অতটা প্রয়োজনীয় নয়, তার আমদানি কমিয়ে দেশজ পণ্যের বিক্রিবাটা বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে কেন্দ্র।
যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক দাবি করেছেন, এতে কোনও নির্দিষ্ট দেশকে উদ্দেশ্য করা হচ্ছে না। তবে এ কথা সত্য যে, চিনের মতো দেশের একচেটিয়া বাণিজ্য বন্ধ করে দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ আর্থিক বছরে চিন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ৮৮ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে চিনের অনুকূলে রয়েছে ৫৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক ঘাটতি। যা অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতির মধ্যে সর্বোচ্চ ফারাক। সেই কারণে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ইলেকট্রনিক্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্য, মেডিক্যাল সরঞ্জাম ইত্যাদি পণ্যে ব্যবসায়িক বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ইলেক্ট্রনিক গেজেট, খেলনা, ফার্নিচার ইত্যাদিতে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। যা নিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল, সরকার বৈদিশিক বাণিজ্যের রাস্তা ক্রমশ সংকুচিত করে দিচ্ছে। ২০১৪ সালে মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে ৩,৬০০ টি জিনিসে শুল্ক বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মূলত টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিক্স সেক্টর। তার মধ্যেই ফের বৈদেশিক বাণিজ্যে কড়াকড়ি আনছে কেন্দ্র।
Comments are closed.