জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে, ডিসেম্বরে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৩৫ শতাংশ! ৫ বছরে সর্বোচ্চ

গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথম মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৩৫ শতাংশে পৌঁছে গেল। পাঁচ বছরের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ। শুধু তাই নয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বোচ্চ সীমা পেরিয়ে এই হার বিপদসীমার ভিতরে ঢুকে পড়ল। সোমবার সরকারি পরিসংখ্যান জানিয়ে দিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ৭.৩৫ শতাংশে চলে গিয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট। তার আগে মূল্যবৃদ্ধির এই হার দেশের অর্থনীতির পক্ষে অবশ্যই অশনি সংকেত। এমনিতেই আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। তার উপর মূল্যবৃদ্ধি যদি এ ভাবে বাড়তে থাকে, তা হলে সেটা যে সরকারি কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ঋণে সুদ কমানো জরুরি। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে গেলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কই বা সুদ কমানোর কথা ভাববে কেমন করে? আর সুদ কমিয়ে খরচের উপর রাশ না টানলে শিল্পদ্যোগীরা বিনিয়োগ করবেন কেমন করে? একদিকে মূল্যবৃদ্ধি চড়া। অন্যদিকে আর্থিক বৃদ্ধি সমানে নামছে। ফলে পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয়। গত ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবর্ষে তা ৫ শতাংশের কাছাকাছিতেই আটকে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশের আর্থিক পরিস্থিতি এই মুহূর্তে খুব খারাপ। শিল্পে নতুন লগ্নি নেই, বেকারত্ব বাড়ছে, বাজারে চাহিদা নেই, গত প্রায় চার মাস ধরে এনআরসি, নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গোটা দেশজুড়ে যে আন্দোলন চলছে, তারও একটা প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। তার উপর জিনিসপত্রের দাম অত্যন্ত চড়া। বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, ভারত কি তবে স্ট্যাগফ্লেশনে চলে যাচ্ছে? স্ট্যাগফ্লেশন হল এমন এক পরিস্থিতি, যা বলে দেয়, অর্থনীতি থমকে গিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আগেই বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতি একবার স্ট্যাগফ্লেশনে পড়লে তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। বিরোধীরা, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতারা বারবার বলেছেন, সরকারের উচিত মনমোহন সিংহের মতো অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নেওয়া। কিন্তু মোদী সরকার তার ধার কাছ দিয়েও হাঁটার পক্ষপাতী নয়।
তথ্য বলছে, আনাজ, ডাল, মাছ, মাংসের দাম বিপুল ভাবে বেড়ে যাওয়ায় মুল্যবৃদ্ধির হাল এই জায়গায় চলে গিয়েছে। গত প্রায় কয়েক বছর ধরে আলুর দাম চড়াই থেকে গিয়েছে। পিঁয়াজের দাম ১৫০ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল কিছুদিন আগে। সরকার সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সরকারের যুক্তি, জানুয়ারি মাসে আনাজপাতির দাম একটু সস্তা হলে মূল্যবৃদ্ধি কমবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরবর্তী আর্থিক নীতি রিভিউ করার কথা আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। তখন কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হয়ে যাবে। শিল্প মহল তাকিয়ে আছে বাজেটের দিকে, অর্থমন্ত্রী পরিস্থিতি সামাল দিতে কী নিদান দেন, তার দিকে।

 

Comments are closed.