বেঙ্গালুরুর রাস্তায় কাশ্মীরি তরুণকে মারধরের ঘটনা ট্যুইট করে পুলিশি-রোষে সাংবাদিক, নিন্দা অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার

কাশ্মীরি তরুণকে বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ফেলে মারধরের ছবি ট্যুইট করে এবার পুলিশকর্তার রোষের মুখে ফাওয়াদ শাহ নামে এক সাংবাদিক। কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে ঘটনাটি ঘটেছে গত ২০ মার্চ।

গত বুধবার, দক্ষিণ-পূর্ব বেঙ্গালুরুর হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেডের সদর দফতরের সামনে আবসার জাহুর ধারকে মারধর করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। রক্তাক্ত আবসারের ছবি ট্যুইট করেন স্থানীয় সাংবাদিক ফাওয়াদ শাহ। ট্যুইটে তিনি লেখেন, ‘২৪ বছরের কাশ্মীরি পড়ুয়া আবসার জাহুর ধারকে বেঙ্গালুরুতে মারধর করা হয়েছে। মডেলিং করে নিজের পড়ার খরচ চালানো আবসার বলছেন, ওরা আমাকে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল। আমাকে ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকতে হচ্ছে, হামলাকারীরা আমার বাড়ির সামনে দিয়ে এমনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেন কিছুই হয়নি। আতঙ্কে আমি কলেজেও যেতে পারছি না।‘

ফাওয়াদ শাহের এই ট্যুইটেই একদিন পর কমেন্ট করেন আইপিএস অফিসার আবদুল আহাদ। তিনি বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ডের ডিসিপি। তদন্ত চলছে এমন একটি বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনার জন্য তাঁকে সতর্ক করে দেন ওই আইপিএস অফিসার এবং ফাওয়াদ শাহের এই কাজকে বেআইনি বলে আখ্যা দিয়ে, প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়ারও অভিযোগ করেন আইপিএস অফিসার আবদুল আহাদ। তিনি লেখেন, ‘ফাওয়াদ শাহ, আপনি জনসমক্ষে একটি তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন, যা একটি অপরাধ। এই মামলায় ইতিমধ্যেই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আপনাকে এই বেআইনি কাজের জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।‘

এরপর সাংবাদিক ফাওয়াদ শাহ আইপিএস অফিসারকে ট্যুইটেই উত্তর দেন। তিনি লেখেন, কাশ্মীরি পড়ুয়াকে মারধরের ঘটনাটি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। আর যে ট্যুইটটি করা হয়েছে তা মোটেও আলোচনা কিংবা মতামত নয়। ফাওয়াদ শাহ আরও বলেন, তিনি যা ট্যুইট করেছেন তা ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের মধ্যে দিয়ে ইতিমধ্যেই যে তথ্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে, পুলিশ বিভাগকে সে ব্যাপারে সঠিক খোঁজখবর রাখারও পরামর্শ দেন ফাওয়াদ। এরপরই ফের ট্যুইট আইপিএস অফিসারের। তিনি কার্যত হুমকির সুরে সাংবাদিক ফাওয়াদ শাহকে বলেন, ‘আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। আপনি আপনার বক্তব্য তদন্তকারী আধিকারিকের কাছে নথিভুক্ত করাতে পারবেন। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, যে সাধারণ মানুষ প্ররোচিত হয় এমন কোনও উসকানিমূলক কাজ আপনি করেননি। এটা গুরুতর অপরাধ।‘

সাংবাদিকের পাশে দাঁড়িয়ে, অ্যামনেস্ট ইন্ডিয়া আইপিএস অফিসারের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, একটি মারধরের ঘটনার কথা তুলে ধরা মোটেই অপরাধের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু পুলিশের এমন হুমকি দেওয়া সাংবাদিকের কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার সমতুল্য। একে অভিব্যক্তির অধিকার খর্ব করার চেষ্টা বলেও মনে করছে অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া। এই ঘটনায় আইপিএস অফিসারের অতিসক্রিয়তার সমালোচনা করেছেন এআইএমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। ট্যুইটেই তিনি বিঁধেছেন অভিযুক্ত আইপিএস অফিসারকে।

Comments are closed.