জয়েন্টের প্রশ্ন কেন বাংলায় নয়, তীব্র ক্ষোভ মমতার, কেন্দ্রের বিরোধিতায় সুজনও, ভাষা বিতর্কে এক সুর তৃণমূল-সিপিএমের

জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশ্নপত্রকে ঘিরে ফের সামনে চলে এল ভাষা বিতর্ক। এবং বাংলা ভাষার প্রশ্নে বিজেপির বিরুদ্ধে এক মেরুতে তৃণমূল ও সিপিএম। কয়েক মাস আগেই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী দলকে একযোগে আন্দোলনে নামার ডাক দিয়েছিলেন। এবার বাংলা ভাষার প্রশ্নে রাজ্যে তৃণমূল ও সিপিএমের একই সুরে বক্তব্য রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ।
সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড জানিয়েছে, এবার জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশ্নপত্র হবে ইংরেজি, হিন্দি ও গুজরাতি ভাষায়। এতে বেদম চটেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার এ ব্যাপারে পরপর চারটি ট্যুইট করে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। গুজরাতি ছাড়া অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষাকে মর্যাদা না দেওয়ায় দেশজুড়ে জোরালো প্রতিবাদ হবে বলে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ট্যুইটারে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, আমাদের দেশ নানা ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা, সম্প্রদায়ের মিলনস্থল। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যই হল আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে অবহেলা করা। এতদিন পর্যন্ত জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরীক্ষা ইংরেজি এবং হিন্দিতেই হয়ে এসেছে। এবার যুক্ত হল গুজরাতি ভাষা। এই সিদ্ধান্ত আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। পরের ট্যুইটে তিনি বলেছেন, আমি গুজরাতি ভাষা ভালোবাসি। কিন্তু বাংলা সহ অন্য আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে উপেক্ষা করা হল কেন? পরবর্তী ট্যুইটে মমতা বলেছেন, এই বিষয়টি যদি সম্মানজনকভাবে না মেটানো হয়, তাহলে সর্বত্র জোরালো প্রতিবাদ হবে।

জয়েন্ট বোর্ডে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো- সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিও। তিনিও মঙ্গলবার ট্যুইটারে তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। একইভাবে ট্যুইট করে জয়েন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন বিধানসভার বামেদের পরিষদীয় নেতা সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী।
রাজনৈতিক অবস্থান ও মতাদর্শ সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী হলেও অভিষেক এবং সুজনের অবস্থান মিলে গিয়েছে বাংলা ভাষার প্রশ্নে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বাংলা ভাষার জায়গা না হওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে একযোগে দুষেছেন অভিষেক ও সুজন।
অভিষেক তাঁর নিজস্ব ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে লেখেন, আমাদের সংবিধানে সবাই সমান। সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কেন শুধু ইংরেজি, হিন্দি ও গুজরাতি ভাষায় প্রশ্নপত্র হবে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের মতে, জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বাংলা, ওড়িয়া, কন্নড়, তেলুগু, তামিল, মারাঠি সব আঞ্চলিক ভাষারই সমান অধিকার থাকা উচিত।
তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে প্রায় একই প্রশ্ন তোলেন সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর প্রশ্ন, কোন যুক্তিতে সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেবলমাত্র ইংরেজি, হিন্দি ও গুজরাতিতে হবে, যেখানে গুজরাতের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম। ভাষা নিয়ে এই বৈষম্য দূর হওয়া উচিত।

মাস কয়েক আগেই ‘এক দেশ, এক ভাষা’ তত্ত্ব সামনে এনে প্রবল বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছিলেন, জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে মর্যাদা দেওয়া উচিত। জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও প্রতিবাদ করেছিলেন। এ রাজ্যের বিভিন্ন দল ও সংগঠন প্রতিবাদে সামিল হয়। তুমুল আন্দোলন করে দক্ষিণের রাজ্যগুলি। এর আগে পশ্চিমবাংলার নাম পরিবর্তন নিয়েও মমতাকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। পরপর দু’বার এই রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখা নিয়ে বিধানসভায় সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করে দিল্লিতে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দিল্লি রাজ্যের নাম পরিবর্তনে সবুজ সংকেত দেয়নি। এই ইস্যুতেও তিনি পাশে পেয়েছেন সিপিএম এবং কংগ্রেসকে। এবার জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে গুজরাতি ছাড়া বাংলা সহ অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষা জায়গা না পাওয়ায় নতুন করে ভাষা-বিতর্ক শুরু হয়েছে। অন্যান্য ইস্যুতে তাদের সঙ্গে বিরোধ থাকলেও এই ব্যাপারে রাজ্যের শাসক দল যে সিপিএমকে যে পাশে পাচ্ছে, সুজনের ট্যুইট-ই তার প্রমাণ।

 

Comments are closed.