‘সীমা ছাড়াবেন না’, মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর হেলিকপ্টার বিতর্কে ধনকড়ের জবাব, ক্রিকেট মাঠে সব বল খেলতে নেই

রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করা নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের উপর নবান্নের মালিকরা ক্ষুব্ধ ছিলেনই, এবার জেলা সফরে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা নিয়েও রাজ্যপালের সঙ্গে তর্কযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। এক সপ্তাহের মধ্যে দু’বার তিনি রাজ্য সরকারের কাছে হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি চেয়েও পাননি। ক্ষুব্ধ ধনকড় তাই সড়ক পথেই নদিয়া জেলার শান্তিপুরে এবং মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় গিয়েছেন। শনিবার তাঁর যাওয়ার কথা মালদহে। রাজভবন সূত্রে খবর, মালদহ সফরেও ধনকড়ের হেলিকপ্টার মিলবে না। রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মুখ না খুললেও রাজ্যপালকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, কী কারণে তাঁর হেলিকপ্টার প্রয়োজন, তা পরিষ্কার করে বলতে হবে রাজ্যপালকে। হেলিকপ্টারের খরচ রাজ্যের মানুষ বহন করে। তাদের তো সব জানতে হবে। চন্দ্রিমার অভিযোগ, রাজ্যপাল নিজের কাজ করছেন না। এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে বিজেপি নেতার মতো রাজনীতি করছেন। সকালবেলায় উঠে তিনি রাজনীতির বাজারে বেরিয়ে পড়বেন, এটা তো চলতে দেওয়া যায় না।
বৃহস্পতিবার নাম না করে রাজ্যপালকে বিঁধেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য ছিল, আমি সাংবিধানিক পদ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কেউ কেউ বিজেপির মুখপাত্রের মতো আচরণ করছেন সাংবিধানিক প্রধান হয়েও। মনোনীত কিছু লোক সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের এই সব বক্তব্য সম্পর্কে রাজ্যপাল শুক্রবার বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বলেছেন, কিছু লোক তাঁদের জিভ বড় বেশি ব্যবহার করছেন হালকাভাবে। ক্রিকেট খেলতে নেমে সব বলই খেলা উচিত নয়। আমার বিবৃতি না বুঝেই কেউ কেউ নানা মন্তব্য করছেন।
হেলিকপ্টার বিতর্কের সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। শান্তিপুরে রাস উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে হেলিকপ্টার চেয়েছিল রাজভবন। সরকার জানিয়ে দেয়, প্রশাসনিক কারণে এখন তাঁকে হেলিকপ্টার দেওয়া যাবে না। ক্ষুব্ধ রাজভবন এর প্রতিবাদে নবান্নকে চিঠিও দেয়। রাজ্যপালের মন্তব্য, কতটা অসৌজন্য! শুক্রবার রাজ্যপাল সস্ত্রীক যান ফরাক্কায় একটি কলেজের অনুষ্ঠানে। তার জন্যই বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের কাছে ফের হেলিকপ্টার চেয়ে ব্যর্থ হন ধনকড়। তিনি বলেন, আমি আমলাদের চিঠি পাঠিয়েছি, তাঁরা কিছু জানাননি। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও বিষয়টি আনা হয়। সেখান থেকেও কোনও জবাব আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী কিছু বললে আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া দেওয়ার চেষ্টা করি। অথচ, দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও আমি কোনও জবাব পাইনি। যাওয়া আসা মিলিয়ে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার সফর করতে হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে ঠিক সময়ে পৌঁছনোর জন্য স্ত্রীকে নিয়ে আমাকে আজ ভোর পাঁচটায় বেরতে হয়েছে। রাজ্যপালের আরও কটাক্ষ, কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আমি রাজ্যের মানুষের সেবা করে যাব। এর থেকে কেউ আমাকে বিরত রাখতে পারবে না।

 

Comments are closed.