মহম্মদ সেলিম: দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ! কার ট্যুইট হাতিয়ার করে অভিযোগ সিপিএম নেতার?

অনিল আম্বানীর ঋণখেলাপি অর্থের পরিমাণ এত বড় যে এখনও তার হিসেবই করা যায়নি! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলেই আইনি পদক্ষেপ থেকে পার পাচ্ছেন তিনি। সাংবাদিক সুচেতা দালালের ট্যুইট রিট্যুইট করে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কর্ণধারকে এভাবেই নিশানা করলেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম।
ঠিক কী অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক সুচেতা দালাল? তাঁর ট্যুইট রিট্যুইট করে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্যই বা কী দাবি করেছেন?
‘Scam 1992: The Harshad Mehta Story’ ওয়েব সিরিজের খাতিরে অনেকেই এখন একডাকে চেনেন সাংবাদিক সুচেতা দালালকে। তাঁর বই থেকেই ১৯৯২ সালের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি এবং শেয়ার বাজারের তলায় চলতে থাকা বেআইনি অর্থ নয়ছয়ের গল্প উঠে এসেছে ওটিটি প্লাটফর্মে। সেই সুচেতা দালাল দিন তিনেক আগে একটি ট্যুইট করেছিলেন। তাতে তাঁর অভিযোগ, বিজয় মাল্য, নীরব মোদী, এসার- রুইয়া কিংবা যতীন মেহতা নন, দেশের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট ঋণখেলাপি আসলে অন্য কেউ। কে সেই ব্যক্তি?
সুচেতা সরাসরি কোনও নাম করেননি। তবে ট্যুইটে তাঁর ইঙ্গিত, কেন্দ্রীয় সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে ওই ঋণখেলাপি ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা হয় না!
এই ট্যুইটটিকেই রিট্যুইট করে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমের দাবি, ওই ঋণখেলাপি ব্যক্তি আর কেউ নন, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তা অনিল আম্বানী। সেলিমের দাবি, কয়েক লক্ষ কোটি টাকার ঋণখেলাপি করেছেন অনিল আম্বানী। আর তাঁর ঋণের পরিমাণ এত বিশাল যে এখনও হিসেবই করা যায়নি। এরপরেই সিপিএম নেতার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডের বাসিন্দার (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের ঠিকানা) সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য এই ‘সুযোগ-সুবিধা’ উপভোগ করছেন তিনি।

কিন্তু যাঁর ট্যুইটের প্রেক্ষিতে মহম্মদ সেলিম আম্বানীর নাম নিয়ে এমন সরাসরি অভিযোগ করলেন সেই সুচেতা দালালের পরিচয় কী?
নব্বইয়ের দশকে সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নামগুলির অন্যতম ছিল হর্ষদ মেহতা ও শেয়ার বাজারের দুর্নীতি। সম্প্রতি সেই আর্থিক দুর্নীতির গল্প নিয়ে চিত্র পরিচালক হনসল মেহেতা একটি ওয়েব সিরিজ তৈরি করেছেন। যার মূল গল্প আসলে সাংবাদিক সুচেতা দালাল ও তাঁর স্বামী দেবাশিস বসুর লেখা ‘The Scam: Who Won, who Lost, who Got Away’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই ওয়েবসিরিজে অন্যতম চরিত্র হিসেবেও রাখা হয়েছে সুচেতার চরিত্রটিকে।
সুচেতা দালালের জন্ম মুম্বইয়ে। স্ট্যাটিস্টিকস বিষয়ে কর্ণাটক কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করে তিনি আইনের ডিগ্রি লাভ করেন বম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর সাংবাদিক এক বিখ্যাত সংবাদমাধ্যমে যোগ দেন সুচেতা।
১৯৯৮ সাল পর্যন্ত টাইমস অফ ইন্ডিয়ার কনসাল্টিং এডিটর হিসেবে কাজ করা সুচেতা দালাল বিজনেস ও ইকনমিক উইং সামলাছেন তিনি। ১৯৯২ সালে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কা ছিল সিকিউরিটিজ স্ক্যাম, যার মাধ্যমে জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের বিপুল পরিমাণ শেয়ারকে বেআইনিভাবে ট্রেডিং করা হয় দুটি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্মীরাও। দেশজোড়া চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা এই খবরের সুচেতার মূল সোর্স ছিলেন এসবিআই ব্যাঙ্কের পিআর ডিপার্টমেন্টের কর্মী শরদ ভিল্লারি। পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তৎকালীন গভর্নর এস ভেঙ্কটারামানণের কাছ থেকেও এই দুর্নীতি মামলার তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন ডাকাবুকো সাংবাদিক। পরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাঙ্ক অফ ডেভেলপমেন্ট দুর্নীতি কাণ্ড, ২০০১ সালের কেতন পারেখ দুর্নীতির মতো একাধিক বৃহত্তম অর্থনৈতিক দুর্নীতি কাণ্ডের খবর সামনে এনে সাংবাদিক মহলে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সুচেতা দালাল।
২০০৬ সালে পদ্মশ্রী সম্মানিত এই সাংবাদিক লেখক এখন মানিলাইফ ম্যাগাজিনের ম্যানেজিং এডিটর। লেখক হিসেবেও পাঠক মহলে সমাদৃত সুচেতা। স্বামী দেবাশিস বসুর সঙ্গে লেখা The Scam: Who Won, Who Lost, Who Got Away বইর ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছে হর্ষদ মেহেতা দুর্নীতির কথা। এছাড়া ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘A.D. Shroff: Titan of Finance And Free Enterprise’ নামে আরও একটি বই প্রকাশ করেন সুচেতা।

Comments are closed.