আসল বিজেপি ১১৭, মুকুল-শুভেন্দু ১৭৭, বাংলায় বাজিমাতের কৌশল তৈরি মোদী-শাহের

তৃণমূলের রেডিমেড সংগঠনকে দলে টেনে বাজিমাত করতে চাইছেন শাহ-নাড্ডারা

জরুরি তলব পেয়ে বিকেলে দিল্লি যাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। উদ্দেশ্য দিল্লির সদর দফতরে বাংলার ভোটের প্রার্থী বাছাই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেওয়া। হাইপাওয়ার্ড কমিটিতে শেষ মুহূর্তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাঁর নাম। ফলে একটা বার্তা স্পষ্ট যে রাজ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুকুল-শুভেন্দু জুটিকে অনেকটা গুরুত্ব দিচ্ছেন শাহ-নাড্ডারা। 

সূত্রের খবর ২৯৪ আসনের মধ্যে কমবেশি ১৭৭ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে শেষ কথা বলবেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা দুই নেতা। 

কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়কে নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিজেপির প্রার্থী বাছাই কমিটি। শেষ মুহূর্তে তাতে যুক্ত হয়েছেন শুভেন্দু।

ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে বাংলায় এসেছিলেন অমিত শাহ। তখনই মুকুল ও সদ্য যোগ দেওয়া শুভেন্দুর সঙ্গে প্রার্থী বাছাই নিয়ে কথা হয় তাঁর। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই সময় ২৯৪ এর মধ্যে ১৭৭ টি আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ভার মুকুল-শুভেন্দুর হাতে তুলে দেন শাহ। তবে বলে দেওয়া হয়েছে, প্রার্থী যেই হোন তাঁর যেন ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হয়। সেটাই একমাত্র মাপকাঠি। মুকুল-শুভেন্দু রাজ্যের ১৮ জন বিজেপি সাংসদের সঙ্গে কথা বলে কাজ করবেন বলে দিল্লি থেকে বার্তা এসেছে রাজ্য দফতরে। বাকি ১১৭ আসনের জন্য সিদ্ধান্ত নেবেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। 

[আরও পড়ুন: কে হবেন সিবিআইয়ের পরবর্তী ডিরেক্টর? ভোটের বঙ্গে তুঙ্গে জল্পনা ]

বিজেপি সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের ৫৪ টি আসনে কে প্রার্থী হবেন তা ঠিক করার ক্ষেত্রে মুকুল রায়ের বড়ো ভূমিকা থাকবে। আবার পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মুর্শিদাবাদের শতাধিক সিটে প্রার্থী বাছাইয়ে অগ্রাধিকার পাবেন শুভেন্দু। প্রসঙ্গত তৃণমূলে থাকার সময় এই জেলাগুলোর পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের মতে, মুর্শিদাবাদ সহ বেশ কয়েকটি জেলায় অন্য দল ভাঙ্গিয়ে তৃণমূল ভরানোর কাজ বেশ সাফল্যের সঙ্গে করেছেন শুভেন্দু। অতীত রেকর্ড দেখে তৃণমূলকে ভাঙতে শাহ-নাড্ডা দায়িত্ব দিয়েছেন সেই মুকুল-শুভেন্দু জুটিকেই। 

[আরও পড়ুন: কেন দলত্যাগ জানান মানুষকে! দলবদলকারীদের কেন্দ্র ধরে রাখতে ৪ কৌশল মমতার ]

সূত্রের খবর স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কিছু তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ রেখে চলছেন মুকুল-শুভেন্দু। জুটির তরফে তৃণমূলের বিধায়কদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, বিজেপিতে তাঁদের টিকিট পাকা। এছাড়া আরও অন্তত ২৪-২৫ জন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছেন মুকুল-শুভেন্দু জুটি। ভোট ঘোষণার পর তাঁদের অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। 

২০১৯ লোকসভায় দুরন্ত ফল করেছিল গেরুয়া শিবির। সেই ফলকে বিধানসভাওয়ারি ফলে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ২৯৪ আসনের মধ্যে ১২১ টি আসনে এগিয়ে বিজেপি। লোকসভার পুনরাবৃত্তি হলেও এই আসন নিয়ে বাংলায় সরকার গড়তে পারবে না বিজেপি। সুতরাং তৃণমূলের পাওয়া আসনে থাবা দেওয়া এখন পাখির চোখ মুকুল-শুভেন্দু জুটির কাছে। 

রাজনৈতিক মহল বলছে, বাংলা দখলে বদ্ধপরিকর অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা ভালই জানেন, বঙ্গ বিজেপির তৃণমূল স্তরের সংগঠনের হাল। ঠিক এই কারণেই মুকুল-শুভেন্দুকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের রেডিমেড সংগঠনকে দলে নিয়ে বাজিমাত করতে চাইছেন শাহ-নাড্ডারা। আর তাই রাতারাতি গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তনী মুকুল-শুভেন্দুর।

উত্তরবঙ্গের ৫৪ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে লোকসভাওয়ারি ফল অনুযায়ী ৩৮ টি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এবার মুকুল রায়ের কাছে ৪০ টি আসনের লক্ষ্য মাত্রা বেঁধে দিয়েছে দিল্লির নেতৃত্ব। কিন্তু এর মধ্যেই কাঁটা হয়ে বিঁধছে বিমল গুরুঙ্গের পাহাড়ে পুনঃপ্রবেশ। সেক্ষেত্রে পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সে আসন ধরে রাখতে বেগ পেতে হতে পারে বিজেপিকে। মুকুল-শুভেন্দু জুটি কি পারবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তৃণমূলের হাত থেকে আসন ছিনিয়ে আনতে? উত্তর মিলবে এপ্রিল-মে মাসে।

Comments are closed.