সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে একটি মামলার তদন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাগেশ্বর রাও? উঠছে অভিযোগ

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর অপসারিত ডিরেক্টর অলোক ভার্মা ও ডেপুটি ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার কোন্দলকে ঘিরে অক্টোবর মাসে চরমে উঠেছিল সিবিআই-এর অন্দরের বিবাদ। ভার্মা ও আস্থানা দু’জনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। পরিস্থিতে এমন জায়গায় পৌঁছোয় যে, সিবিআই-এর বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে হস্তক্ষেপ করতে হয় কেন্দ্রকে। সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় অলোক ভার্মাকে। অলোক ভার্মার সঙ্গে রাকেশ আস্থানাকেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে ২৬ অক্টোবর মধ্যরাতে অলোক ভার্মার জায়গায় সিবিআই-এর অন্তর্বর্তীকালীন ডিরেক্টর করা হয় এম নাগেশ্বর রাওকে। কিন্তু নিজের এই অপসারণের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন অলোক ভার্মা। যার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, মামলার নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এম নাগেশ্বর রাও অন্তর্বর্তীকালীন সিবিআই প্রধান হিসাবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও, কোনও পলিসি ডিসিশন নিতে পারবেন না।
কিন্তু কোর্টের নির্দেশের একমাসের মধ্যেই এম নাগেশ্বর রাওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে একটি মামলার তদন্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যম ‘এন ডি টিভি’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের একটি ঘটনায় সঞ্জয় ভান্ডারি নামের এক চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল আয়কর দফতরের কিছু আধিকারিককে ঘুষ দেওয়ার। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আয়কর দফতরের জয়েন্ট কমিশনের দফতরেও হানা দিয়েছিল সিবিআই-এর একটি তদন্তকারী দল। জানা যায়, নিজের এক মক্কেলকে বাঁচাতে ও তাঁর আয়কর নথির গরমিল চাপা দিতে সঞ্জয় ভান্ডারি নামের ওই চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট মিডল ম্যান হিসাবে আয়কর দফতরের আধিকারিকদের ঘুষ দিয়েছিলেন। একাধিক শীর্ষ আয়কর কর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, যার তদন্ত চালাচ্ছিল সিবিআই। কিন্তু জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ মার্চ এম নাগেশ্বর রাও এই তদন্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। তখনও তিনি সিবিআই-এর মাথায় বসেননি এবং তখন সিবিআই প্রধান ছিলেন অলোক ভার্মা।
‘এন ডি টিভি’র প্রতিবেদনে প্রকাশ, অলোক ভার্মা সেই তদন্ত বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ফাইল রিওপেন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও চলতি মাসের প্রথমে ওই তদন্ত না করার সিদ্ধান্ত ফের নেন এম নাগেশ্বর রাও। কিন্তু এবার সেই সিদ্ধান্ত নেন অন্তর্বর্তীকালীন সিবিআই ডিরেক্টর হিসেবে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, অলোক ভার্মা যখন ফাইল রিওপেন করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন, সেখানে কেন তা মানা হল না এবং সুপ্রিম কোর্টের পলিসি ডিসিশন না নেওয়ার স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও নাগেশ্বর কেন এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করলেন।
তবে সিবিআই সূত্রে অন্য কথা বলা হচ্ছে। তাদের দাবি, ১৪ মার্চ তদন্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নাগেশ্বর রাও, এটা ঠিক। অলোক ভার্মা কেসটি রিওপেন করতেও বলেছিলেন। কিন্তু রিওপেনের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে নেওয়ার আগেই ভার্মা ওই পদ থেকে সরে যান এবং কাকতালীয়ভাবে নাগেশ্বর রাও এখন সেই পদে রয়েছেন। কিন্তু যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি পলিসি ডিসিশন নিতে পারছেন না, তাই কেসটি রিওপেন করার নির্দেশে তিনি সই করতে অস্বীকার করেছেন।

Comments are closed.