রেল থেকে ব্যাঙ্ক, কেন্দ্রীয় সরকারি মন্ত্রক কিংবা প্রশাসনিক পদে চাকরি, সব ধরনের সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে আসা হচ্ছে একই পরিচালন ব্যবস্থার অধীনে। তার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি (NRA)। তারাই অনলাইনে কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট (CET) পরিচালনা করবে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে চাকরির একাধিক আবেদনপত্র জমা দেওয়া ও পরীক্ষার দিন শেষ হতে চলেছে। পরিবর্তে একটিই পরীক্ষা হবে। তার মাধ্যমেই বেছে নেওয়া হবে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের।
এখন কেন্দ্রীয় সরকারি ব্যাঙ্ক, রেল, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি চাকরির ক্ষেত্রে প্রায় ২০ টি নিয়োগ সংস্থা আছে। বেশ কিছুদিন ধরেই একটিমাত্র সংস্থার ছাতার তলায় সবাইকে আনার চিন্তাভাবনা করছিল মোদী সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবে সিলমোহর পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, চাকরিপ্রার্থী যুবক-যুবতীদের টাকা, সময় এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়ক হবে নয়া ব্যবস্থা। সরকারি চাকরির জন্য নানাবিধ পরীক্ষা দেওয়ার সমস্যা থেকে মিলবে মুক্তি।
জানা যাচ্ছে, এই নতুন নিয়মে কেবল প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। যে যে ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি টেস্টের পর টিয়ার টু এবং টিয়ার থ্রি পরীক্ষা দিতে হয়, সেখানে পরবর্তী দফাগুলির তত্ত্বাবধানে থাকবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিয়োগকারী আগের সংস্থাই। শুধু প্রিলিমিনারি টেস্টকে এই ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির আওতায় আনা হচ্ছে। কেন্দ্র বলছে চাকরি ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্বেই সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থীর চাপ থাকে। এটাই সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়া। তাই প্রিলামিনারি টেস্টগুলোকে এক ছাতার তলায় আনতে পারলে, নিয়োগকারী সংস্থার পক্ষে পরবর্তী ধাপের প্রার্থী বাছাই তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।
ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি এখন কেন্দ্রীয় স্তরের ২০টি নিয়োগ সংস্থার মধ্যে তিনটির প্রিলিমিনারি টেস্ট পরিচালনা করবে। এগুলি হল, রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, স্টাফ সিলেকশন কমিশন এবং ইনস্টিটিউট অব ব্যাঙ্কিং পার্সোনেল সিলেকশন। অর্থাৎ, নয়া এজেন্সির আওতায় আসছে রেল, সরকারি কর্মী এবং ব্যাঙ্ক। পরে সবকটি নিয়োগ সংস্থাকে নিয়ে আসা হবে এক ছাতার নীচে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থায় একজন পরীক্ষার্থী যা নম্বর পাবেন, সেই র্যাঙ্ক বা ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে তাঁকে সরাসরি ইন্টারভিউ অথবা মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ডাকবে সরকারি সংস্থা। যদি পরবর্তী ধাপের কোনও বাছাইয়ের প্রক্রিয়া থাকে, সেখানেও এই স্কোরের ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে বিবেচনা করবে নিয়োগকারী সংস্থা।
শুধু বড় শহর নয়, জেলায় জেলায় এই পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। কর্মপ্রার্থীদের আবেদনের সময় পোর্টালে নিজেদের সেন্টার বাছাই করার সুযোগ থাকবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানাচ্ছেন যে, দরিদ্র ও মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের যাতে দূরে পরীক্ষা দিতে যেতে না হয়, তা নিশ্চিত করতেই অনলাইনে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ব্যবস্থা।
ইংরেজির পাশাপাশি কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট নেওয়া হবে আঞ্চলিক ভাষাতেও। নতুন ব্যবস্থা চালু করতে মোট ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মোদী সরকার। আপাতত ১১৭টি জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।