রঘুরাম রাজনঃ মুখ বন্ধ রাখতে বলে সরকারি ফোন বা ট্রোল আর্মিতে বাস্তব বদলায় না, অসহিষ্ণু না হয়ে সমালোচনা শুনুক সরকার

সরকারের সমালোচনা করলেই সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে অনবরত ফোন আসতে শুরু করে। অযাচিতভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়, মুখ বন্ধ রাখার কিংবা মন্তব্য প্রত্যাহারের। পাশাপাশি সমালোচকের কপালে জোটে শাসক দলের ট্রোল আর্মির আক্রমণ। সমালোচনার মূল উদ্দেশ্য এই আক্রমণ প্রতিহত করা নয়। কিন্তু সমালোচকের মুখ বন্ধ করে সরকারের জয় নিশ্চিত করা যায় না। সমালোচনা বন্ধ করে কি সরকার আসলে মেক বিলিফ দুনিয়ার বিচরণ করতে চাইছে? এভাবে বাস্তব এড়ানো যায় না। এই ভাষাতেই শাসক দলকে সহিষ্ণুতার পাঠ দিলেন রঘুরাম রাজন।

নিজস্ব ব্লগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন লিখেছেন, সমালোচনাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে নীতি নির্ধারণেও ভুল হয়। নাম না করে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর লিখেছেন, জনগনের প্রতি কোনওরকম অসহিষ্ণুতা, তা অভ্যন্তরীণ হলেও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তিনি লেখেন, কোনও সমালোচনা করলেই যদি সরকারের কোথাও থেকে অনবরত ফোন আসতে শুরু করে, সমালোচককে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়, অথবা শাসক দলের আইটি বাহিনী তাঁকে ট্রোল করা শুরু করে তখন, অনেক সমালোচকই সুর নরম করে ফেলেন। কিন্তু সমালোচনার পথ বন্ধ হয়ে গেলে সরকার এক কৃত্রিম বিশ্বাসের দুনিয়ায় থাকতে শুরু করবে। একটা সময় কঠিন বাস্তবকে অস্বীকার করার কোনও উপায়ই থাকবে না বলে লেখেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক রঘুরাম রাজন। তিনি আরও লেখেন, নিজেদের অতীত গৌরব দিয়ে বিদেশি ভাবনাকে অস্বীকার করা আসলে নিরাপত্তাহীনতার পরিচয়। আর এতে আর্থিক প্রগতিও বাধা পায়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের পুনর্গঠন হয়েছে। পিএমইএসই-র দুই সদস্য শমিকা রবি ও রথীন রায়, যাঁরা সরকারের বিভিন্ন আর্থিক নীতির বিরোধিতা করেছেন, এবার আর তাঁদের পিএমইএসাইতে জায়গা হয়নি।
রঘুরাম রাজন ব্লগে লিখেছেন, প্রকাশ্য সমালোচনা পথ শোধরানোর সুযোগ করে দেয়। তিনি লেখেন, বিদেশি প্রতিযোগিতার মুখে আমাদের সংস্কৃতি, ভাবনা, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে, আমরা কি এতটাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি? তাই অগ্রগতির লক্ষ্যেই সুস্থ সমালোচনার পরিবেশ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন।

Comments are closed.