দেশের আর্থিক সঙ্কট অভূতপূর্ব, ৭০ বছরে এমন হয়নি, বললেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান

৩১ শে মার্চ শেষ হওয়া আর্থিক বছরে ভারতের জিডিপি ছিল ৬.৮। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ভারতের ৫ ট্রিলিয়ন ইকনমি হওয়ার আকাঙ্খার কথা। দাবি করেছিলেন, তাঁর আমলে নিউ ইন্ডিয়ার অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে। কিন্তু সুবাতাস যে কখন অন্য খাতে বইতে শুরু করে, তা বোঝা অর্থনীতিবিদদের কাজ। তাঁরা বলছেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ, বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি এসে ঠেকেছে ৫.৮ এ। আগামী তিন মাসের মধ্যে তা ধরে রাখা তো দূর অস্ত, বরং তা কমে হতে পারে ৫.৭। এই পরিস্থিতিতে বোমা ফাটালেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার। বললেন, দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে এমন সঙ্কট অভূতপূর্ব। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিরাচরিত প্রথা ভেঙে যা যা করা দরকার, করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যানের এই মন্তব্যে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে মোদী সরকার।
দেশের প্রথম সারির অর্থনীতিবিদ তথা নীতি আয়োগের নম্বর টু, রাজীব কুমারের এই মন্তব্য এল এমন একটা সময়ে, যখন দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ৫ ট্রিলিয়ন তো দূর অস্ত, বরং আগের চেয়েও জিডিপি কমে যাওয়ার আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। এমন একটা সময় নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার বললেন, সরকার অত্যন্ত ভালোভাবে বুঝতে পারছে, সঙ্কটটা আর্থিক ক্ষেত্রে। লিকুইডিটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা দেউলিয়া হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করছে। তাই এই পরিস্থিতির বদলে সরকারকে পদক্ষেপ করতেই হবে।
মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে, বর্তমান আর্থিক অবস্থাকে অভূতপূর্ব বলে ব্যাখ্যা করেছেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিগত ৭০ বছরে আমি লিকুইডিটি নিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখিনি। যখন সামগ্রিকভাবে পুরো আর্থিক ক্ষেত্রকেই প্রবল দুশ্চিন্তার মধ্যে যেতে হচ্ছে।
লিকুইডিটির কী অবস্থা তা বোঝাতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ বলেন, কেউ কাউকে ভরসা করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতি যে শুধুমাত্র সরকার এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে, তা নয়। বরং তা বেসরকারি ক্ষেত্রের একেবারে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। সেখানে কেউ কাউকে ধার দিতে রাজি হচ্ছেন না। এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে কী করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার? তারও উপায় বাতলে দিয়েছেন রাজীব কুমার। তাঁর মতে, প্রথমত আপনাকে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যা অনন্য। দ্বিতীয়ত, সরকারকে এমন সমস্ত পদক্ষেপ নিতে হবে যেগুলো প্রাইভেট সেক্টরের দুশ্চিন্তা খানিকটা হলেও দূর করতে পারে।
ধুঁকছে অটোমোবাইল শিল্প। মন্দার আঁচ লেগেছে টেক্সটাইল, বিস্কুট শিল্পেও। বিপুল ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে শিল্প সংস্থাগুলো। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই শিল্পপতিদের হাতে বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে সরকারের এগিয়ে আসা ছাড়া আর কোনও উপায় দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। সরকারের তরফে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, এই ধারণা তৈরির চেষ্টা হলেও, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পর, তা আর ধোপে টিকছে না। ফলে কেন্দ্র ঠিক কী পদক্ষেপ নেবে তার উপর নির্ভর করে আছে মন্দার আঁচে টালমাটাল দেশের শিল্প ক্ষেত্র।

Comments are closed.