রামদেবের করোনা প্রতিষেধকের দাবি খারিজ কেন্দ্রের, বন্ধ রাখতে বলা হল করোনিলের বিজ্ঞাপন, চাওয়া হল ওষুধের কম্পোজিশন

পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের তৈরি করোনা প্রতিষেধক প্রকাশ্যে আসার দিনই তার বিজ্ঞাপনী প্রচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল কেন্দ্র। করোনিল নামে এই ওষুধ ও তার কম্পোজিশনের তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক।

সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা গত পাঁচ মাস ধরে করোনার প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ১০০ শতাংশ নিশ্চিয়তা নিয়ে কোনও ওষুধ বা প্রতিষেধক বাজারে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বাবা রামদেবের সংস্থা ‘পতঞ্জলি’ সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করে করে দেয় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আনছে করোনার আয়ুর্বেদিক ওষুধ। ৫৪৫ টাকা দামের এই করোনিল কিট দু’সপ্তাহের মধ্যে রোগীকে সুস্থ করে দেবে বলে দাবি করেন পতঞ্জলির প্রতিষ্ঠাতা রামদেব। এই প্রচারে শোরগোল পড়ে যায় সাড়ে চার লক্ষ করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে যাওয়া ভারতে। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এল কেন্দ্র। মঙ্গলবারই কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রক একটি বিবৃতি দিয়ে পতঞ্জলির কাছে তাদের করোনার ওষুধ ও তার কম্পোজিশন নিয়ে সমস্ত তথ্য চেয়ছে। জানানো হয়েছে, সরকারি পরীক্ষা ছাড়া এভাবে ওষুধের বিজ্ঞাপন ড্রাগস ও ম্যাজিক রেমেডিস অ্যাক্ট, ১৯৫৪-এর আওতায় পড়বে।

Ramdev Corona Cure

বিবৃতিতে আয়ুষ মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে মন্ত্রক জানতে পেরেছে কোভিডের জন্য পতঞ্জলির ওষুধের কথা। তাদের কাছে সমস্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাই সরকারের পরীক্ষার আগে এ বিষয়ে সমস্ত বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখতে হবে। করোনার ওই আয়ুর্বেদিক ওষুধ কী দিয়ে তৈরি তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কোন কোন হাসপাতালে গবেষণা চালানো হয়েছে, ইনস্টিটিউশনাল এথিকস কমিটির ছাড়পত্র রয়েছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে পতঞ্জলির কাছ থেকে। লাইসেন্স এবং ওষুধের অনুমোদন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যও চেয়েছে আয়ুষ মন্ত্রক।

সপ্তাহ দুয়েক আগে করোনার ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্যের দাবি করেছিল পতঞ্জলি। রামদেবের সংস্থার সিইও আচার্য বালাকৃষ্ণ জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর পরই আমরা একদল বিজ্ঞানীকে নিয়োগ করেছিলাম। ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার উপাদান খুঁজে বের করা হয়। এরপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয় করোনা পজিটিভ রোগীদের উপর। আমরা ১০০ শতাংশ ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি। তখন এ নিয়ে কোনও প্রতক্রিয়া দেয়নি আইসিএমআর কিংবা কেন্দ্র।

এদিকে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে রামদেব সেই ওষুধ সামনে এনে দাবি করেন, ‘করোনিল ও শ্বাসারি’ নামে ওই ওষুধটি দেশের ২৮০ জন করোনা রোগীর মধ্যে প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। মাত্র ৫৪৫ টাকা দামের ওই ওষুধের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সারা দেশে পাওয়া যাবে। অশ্বগন্ধা, গিলোই ও তুলসি সমৃদ্ধ করোনিল খেলে করোনা রোগী ১০০ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে দাবি করে পতঞ্জলি। শুধু করোনার চিকিৎসা নয়, করোনাকে সমূলে উপড়ে ফেলার ক্ষমতা ভারতীয় আয়ুর্বেদের আছে বলে রামদেবের দাবি। তিনি জানান, বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই এই ওষুধ বাজারে আনা হচ্ছে। যদিও সেই ওষুধের কোনও পরীক্ষাই হয়নি সরকারি স্তরে। তাই শোরগোল ও আলোচনার মুখে পতঞ্জলিকে নিয়ে কড়া অবস্থান নিল কেন্দ্রীয় সরকার।

 

Comments are closed.