দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের বিলাসবহুল গেস্ট হাউসে রেভ পার্টির হদিশ, আটক নামী কলেজের ১২৪ ছাত্র-ছাত্রী

দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত লাগোয়া সোনিপাতের এক পশ এলাকায় হদিশ মিলল রেভ পার্টির। এই রেভ পার্টিতে মূলত যাতায়াত ছিল বড়-বড় বেসরকারি স্কুল, কলেজের পড়ুয়াদের। শুক্রবার গভীর রাতে সোনিপতের একটি গেস্ট হাউসে হানা দিয়ে এই রেভ পার্টির হদিশ পায় পুলিশ এবং আবগারি দফতরের বিশেষ দল। এই রেভ পার্টি থেকে ১২৪ জন পড়ুয়াকে আটক করে হরিয়ানা পুলিশ ও আবগারি দফতরের অফিসাররা। রেভ পার্টিতে হানা দিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে, গেস্ট হাউসটিতে এই রেভ পার্টির আয়োজন করতেন কেন্দ্রীয় কাস্টমস বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক।

পুলিশ জানিয়েছে, রেভ পার্টি থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রচুর মাদক দ্রব্য। জানা গেছে, জনৈকা মীরা কুমারী নামে এক মহিলা এই গেস্ট হাউসটির মালিক। তাঁর গেস্ট হাউসে প্রদীপ কুমার শর্মা নামে কেন্দ্রীয় কাস্টমস বিভাগের এক আধিকারিক এই রেভ পার্টি ব্যবস্থা করেছিলেন। আটক পড়ুয়ারা বেশিরভাগই স্থানীয় বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ ও দিল্লির কিছু নামী কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী বলে জানা গেছে। তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে। আটকদের মধ্যে সাত জন বিদেশি ছাত্রও ছিল বলেও জানা গিয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষায় প্রত্যেকের শরীরেই প্রচুর পরিমাণে মাদকের চিহ্ন মিলেছে। যদিও পরে ওই পড়ুয়াদের সতর্ক করে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বিষয়টি পড়ুয়াদের পরিবার এবং তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জানান হয়েছে।

ঘটনায় যশপাল ও দীনেশ নামে ওই কাস্টমস আধিকারিকের দুই শাগরেদ এবং ওই বাড়ির মালকিনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশকে ধৃতরা জানিয়েছেন, প্রদীপ কুমার শর্মা নামের ওই অধিকারিক মাঝে মাঝেই গেস্ট হাউসে এরকম রেভ পার্টির আয়োজন করতেন। যেখানে দিল্লি থেকেও সমাজের উঁচুতলার বহু মানুষ যেতেন। তার পাশাপাশি শুক্রবার এবং শনিবার রাতে মাঝে-মাঝেই স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রেভ পার্টির আয়োজন করা হোত। সব ধরনের মাদকই পার্টিতে সরবরাহ করা হোত। রাত ১০ টা-সাড়ে ১০ টা নাগাদ পার্টি শুরু হোত, চলতো প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত। পুলিশ জানিয়েছে, পার্টি থেকে ধৃত দীনেশ হলেন কাস্টমস আধিকারিক প্রদীপ কুমার শর্মার গাড়ির ড্রাইভার আর পার্টিতে মাদক সরবরাহের ভার ছিল তাঁরই সঙ্গী যশপালের উপর।

পুলিশ জানিয়েছে, এই রেভ পার্টির মূল উদ্যোক্তা কাস্টমস আধিকারিক প্রদীপ কুমার শর্মার খোঁজ চলছে। শুক্রবার রাতে ওই গেস্ট হাউসে হানা দেওয়ার সময় পার্টিতে অংশ নেওয়া প্রত্যেক পড়ুয়াই ছিলেন মাদকের নেশায় বুঁদ। অনেকের কোনও হিতাহিত জ্ঞানও ছিল না। প্রায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা ছিল কয়েকজনের। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা অনেকদিন ধরেই ওই বাড়িটিতে এই ধরনের রেভ পার্টি চলার খবর পাচ্ছিলেন। কিন্তু সঠিক তথ্য না পাওয়ায় তাঁরা সেখানে হানা দিতে পারছিলেন না। শুক্রবার রাতে নির্দিষ্ট সূত্র মারফত নিশ্চিত তথ্য হাতে আসার পরই ওই গেস্ট হাউসে হানা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন অভিযানের নেতৃত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিক সন্দীপ কুমার। পুলিশ জানিয়েছে, যেহেতু এলাকাটির আশেপাশে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সেখান থেকে তাঁরা মাঝে মাঝেই খবর পাচ্ছিলেন, রাতে অনেক পড়ুয়াই হস্টেলের বাইরে থাকেন বা দেরি করে হস্টেলে ফিরছেন। এই অভিযোগ হস্টেলের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও একটা প্রশ্ন তুলছিল। কয়েকদিন ধরে এই ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ সজাগ হয়ে বিষয়টির উপর নজর রাখতে শুরু করে। উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে মদ, বিয়ারের পাশাপাশি রয়েছে ১৯০ টি বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট, ২০ ধরনের ইনজেকশন এবং প্রচুর সিরিঞ্জ। শুক্রবার রাত ১১ টা নাগাদ খবর পেয়ে পুলিশ হানা দেয় ওই গেস্ট হাউসেওর রেভ পার্টিতে।

Comments are closed.