আত্মহত্যার খবর সম্প্রচারে বিশেষ সতর্ক থাকুক সংবাদমাধ্যম, গাইড লাইন জারি প্রেস কাউন্সিলের

আত্মহত্যার খবর সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমকে আরও সতর্ক এবং সংবেদনশীল হতে বলল প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া।

খবর সম্প্রচার কিংবা শিরোনাম লেখার ক্ষেত্রে সাংবাদিক, সম্পাদক এবং মিডিয়া হাউজগুলো যেন আত্মহত্যার খবরকে অযথা রোমাঞ্চকরভাবে পরিবেশন না করেন, সে ব্যাপারেও আবেদন জানিয়েছে প্রেস কাউন্সিল। পাশাপাশি আত্মহত্যার সংবাদ বা সুইসাইড রিপোর্টিং যেন এমনভাবে না হয়, যাতে বোঝায় যে আত্মহত্যাই কোনও সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।

প্রেস কাউন্সিল জানিয়েছে, সাংবাদিকরা যেন আত্মহত্যার পদ্ধতি নিয়ে বিশদ চর্চায় না যান। এছাড়াও আত্মহত্যার স্থান উল্লেখ করতেও মানা করা হয়েছে। কোনও আত্মহত্যার ঘটনার ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে প্রেস কাউন্সিলের তরফে।

প্রেস কাউন্সিলের তরফে যে নতুন নির্দেশিকা গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানেই বলা হয়েছে কীভাবে মানসিক অসুস্থতা এবং আত্মহত্যার ঘটনার সংবাদ পরিবেশন করা উচিত।

গতবছর প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে দেখা যাচ্ছে, তামিলনাড়ুর ৪৩.৩ শতাংশ আত্মহত্যা সংক্রান্ত খবরেই আত্মহত্যার পদ্ধতি বিশদে আলোচনা করা হয়েছে। মাত্র ২.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতা কিংবা আত্মহননের প্রবণতার চিকিৎসার ঠিকানা এবং যোগাযোগের নম্বর দেওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের মেন্টাল হেলথ কেয়ার অ্যাক্ট বলছে, সংবাদমাধ্যমের আত্মহত্যার ছবি কিংবা কোনও ব্যক্তি যদি মানসিক অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যান, তাঁর অনুমতি ছাড়া অন্য যেকোনও তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের এবিষয়ে পৃথক গাইডলাইনেও এমনই কথা বলা হয়েছে। দেশের প্রেস কাউন্সিল এই দুটি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে নিজস্ব গাইডলাইন তৈরি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এখনই সেই গাইডলাইন অনুসরণ করতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, সর্বভারতীয় ইংরেজি ও হিন্দি নিউজ চ্যানেল এনডিটিভির বিরুদ্ধে অনলাইন পিটিশন দাখিলের একটি ঘটনার পর। সেই পিটিশনে উদাহরণ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এনডিটিভি এমনভাবে খবর পরিবেশন করেছে, যাতে মনে হয় ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ, পিইউবিজি কিংবা মোমো খেলতে গিয়েই বিভিন্ন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। অথচ আত্মহত্যার কারণ মোটেও তা নয়। আত্মহত্যার জন্য মানসিক অসুস্থতাই দায়ী।

পিটিশনার কেন এনডিটিভিকে বেছে নিলেন? সেকথাও জানানো হয়েছে। দেশে নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য এনডিটিভি। তাই তাদের এমন ধারায় সংবাদ পরিবেশন মানায় না, বলে দাবি পিটিশনারের। এনডিটিভির প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র সাংবাদিক প্রণয় রায় বিষয়টি মেনে নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরও সাবধান হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যেখানে আত্মহত্যা রোধে সহায়ক মানসিক চিকিৎসালয়ের ঠিকানা এবং যোগাযোগের নম্বর দেওয়া উচিত, সেখানে দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে সেই প্র্যাকটিস নেই। রিপোর্টে প্রকাশ, একমাত্র ব্যতিক্রম দ্য হিন্দু। তারা অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশন করেছে। এবং প্রতিটি রিপোর্টের শেষেই মানসিক অসুস্থতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে মানসিক চিকিৎসালয়ের সন্ধান দেওয়া হয়েছে।

Comments are closed.