তন্ময় ভট্টাচার্য: বিজেপির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ইস্যুতে রাজ্যের সব দলের এক হতে সমস্যা কোথায়, পতাকা ছেড়েও হতে পারে আন্দোলন

‘রাজনীতিতে অস্পৃশ্যতা বলে কিছু নেই, ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন তৃণমূলের সঙ্গেও করা যেতে পারে’, একথা বলে সম্প্রতি সিপিএমের অন্দরে এক তীব্র বিতর্কের সূচনা করেছেন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের এই বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। উত্তর ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক পলাশ দাসের কাছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট জানতে চেয়েছিল, ঠিক কী বলেছেন তন্ময় ভট্টাচার্য। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, তৃণমূলকে নিয়ে তন্ময় ভট্টাচার্যের এই বক্তব্যের পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তা খারিজ করেনি রাজ্য সিপিএম। এই পরিস্থিতিতে দলের দু’দিনব্যাপী রাজ্য কমিটির মিটিংয়ের মাঝে আরও এক ধাপ এগিয়ে দরকারে রাজ্যের বিজেপি বিরোধী সব দলের একযোগে আন্দোলেনের পক্ষে সওয়াল করলেন তন্ময় ভট্টাচার্য।

প্রশ্ন: তৃণমূলকে নিয়ে আপনার বক্তব্য নিয়ে এখনও দলের মধ্যে বিতর্ক চলছে। অনেকেই আপনার বক্তব্যকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ঘোষিত লাইনের বিরোধী বলে ব্যাখ্যা করছেন।

তন্ময় ভট্টাচার্য: এর মধ্যে দল বিরোধী কথা আসছে কোথা থেকে। আমি আমার বক্তব্য ফেসবুক পেজেও স্পষ্ট করেছি। আমি মনে করি, পরিস্থিতি অনুযায়ী, ইস্যু অনুযায়ী অনেক সময় রাজনীতির বদল ঘটে। কোনও নির্দিষ্ট ইস্যুর ওপর দাঁড়িয়ে যে কারো সঙ্গে মিলে আন্দোলন করা যেতেই পারে। তাছাড়া এটা নতুন কিছুও নয়। এমনকী তেমন কোনও ইস্যুতে রাজ্যের বিজেপি বিরোধী সব দল এক হয়েও আন্দোলনে নামার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই যে বিলগ্নীকরণ ইস্যু বা ইভিএম বাতিলের দাবি, এমন নানা বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে, রাজ্য স্তরে সব বিরোধী এক জায়গায় আসছে। সেখানে যদি যে কেউ থাকে, আমি কি বলব ওরা আছে বলে আমরা থাকব না? এটা হয় নাকি কখনও?

প্রশ্ন: কিছুদিন আগে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমও ট্যুইট করে বলেছিলেন, বিজেপিকে প্রধান শত্রু চিহ্নিত করতে হবে। লোকসভা ভোটের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপনিও কি তাই বলছেন?

তন্ময় ভট্টাচার্য: বিজেপি প্রধান বিপদ সেটা তো আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই বলছেন। রাজ্যের ক্ষেত্রেও এটা প্রাসঙ্গিক। আমরা তো গত কয়েক বছরে পতাকা ছাড়া তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যে একাধিক আন্দোলন করেছি। বিপিএমও তো হয়েইছিল সেই কারণে। এখন দরকার পড়লে বিজেপি বিরোধী সমস্ত দলও পতাকা ছাড়া এক ছাতার তলায় এসে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন করতেই পারে। মঙ্গলবারই সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, লোকসভা অধিবেশনের পর ইভিএম নিয়ে সমস্ত বিরোধী দল আলোচনায় বসবে। আজ তৃণমূল ইভিএমের বিরোধিতা করছে, অনেক আগেই সিপিএম এর বিরোধিতা করেছে। এখন একসাথে এর বিরুদ্ধে ডেপুটেশন, আন্দোলন চলতেই পারে। নির্দিষ্ট কোনও ইস্যুতে কারও যদি সরাসরি তৃণমূলে আপত্তি থাকে তবে পতাকা ছাড়াও আন্দোলন কর্মসূচি হতে পারে। তবে এটা ঠিক বিজেপির বাড়বাড়ন্তের জন্য তৃণমূলের একটা ভূমিকা আছে। একথা তৃণমূললে স্বীকার করতে হবে।

প্রশ্ন: এখন রাজ্যের যা পরিস্থিতি সিপিএম কেন ধারাবাহিক আন্দোলন, কর্মসূচি নিতে পারছে না?

তন্ময় ভট্টাচার্য: আমাদের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। দলের সংগঠনেও বিভিন্ন স্তরে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। সঠিক রাজনৈতিক লাইন নিয়ে সংগঠনকে মজবুত করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিষয় হল, একদম শাখা থেকে শীর্ষ স্তর পর্যন্ত নেতৃত্বের পারফরমেন্সের সঠিক মূল্যায়ন। এই ক্ষেত্রে, মানে নেতৃত্বের জায়গায় ঘাটতি থাকলে দলের দুর্বলতা দূর করা মুশকিল।

Comments are closed.