২০১৬ বিধানসভা ভোটের নিরিখে স্রেফ পাটিগণিতের অঙ্কে রাজ্যে তৃণমূল এগিয়ে ৩৮ কেন্দ্রে, কংগ্রেস ৪, সিপিএম-বিজেপি শূন্য

এটা ঠিকই, বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে লোকসভা ভোটের সম্পূর্ণ এবং সঠিক ছবি কোনওভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়। এমনকী, বিধানসভা নির্বাচনের ফলের ওপর ভিত্তি করে লোকসভা ভোটের রেজাল্ট কী হতে পারে, তারও আগাম আঁচ পাওয়া যায় না পুরোপুরি। কিন্তু রাজ্যে শেষ যে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, অর্থাৎ ২০১৬ বিধানসভা ভোট, তার ফলাফলকে লোকসভা আসনে ফেলে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, স্রেফ পাটিগণিতের অঙ্কে রাজ্যে তৃণমূল ৩৮ টি এবং কংগ্রেস ৪ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বাম এবং বিজেপি এগিয়ে নেই কোনও কেন্দ্রেই।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল একাই পেয়েছিল ৩৪ টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ৪ টি আসন, বামেরা ২ টি এবং বিজেপি পেয়েছিল ২ টি আসন। কিন্তু ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফলাফলকে পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে বিজেপির জেতা দার্জিলিং এবং আসানসোল কেন্দ্র দুটিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
উল্টো দিকে, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং সিপিএমের জেতা ৬ টি আসনেই (রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ) ২০১৬ সালের আসন সমঝোতার নিরিখে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এবার লোকসভায় আসন সমঝোতা ভেস্তে যাওয়ার ফলে ২০১৬ বিধানসভার ফলের নিরিখে রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে একক বৃহত্তম দল তৃণমূল। দুটি আসনেই আলাদাভাবে সিপিএম এবং কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট তৃণমূলের থেকে কম। তাই ২০১৬ বিধানসভার নিরিখে স্রেফ পাটিগণিতের অঙ্কে রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে অনেক এগিয়ে তৃণমূল।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে কংগ্রেস ধরে রাখতে পারে তাদের গত লোকসভা ভোটে জেতা ৪ কেন্দ্রই (মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, বহরমপুর ও জঙ্গিপুর)। এই চারটি কেন্দ্রেই ২০১৬ বিধানসভা ভোটের ফল ধরলে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট তৃণমূলের থেকে বেশি।
বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা হলে রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ, দুটি আসনই যেতে পারত বামেদের দখলে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোটের পরিমাণ সিপিএম ও কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোটের চেয়ে কম, কিন্তু এককভাবে বাম-কংগ্রেসের চেয়ে অনেকটা বেশি। একই ছবি মুর্শিদাবাদেও। এই কেন্দ্রে সিপিএম এবং কংগ্রেসের মিলিত ভোট তৃণমূলের ভোটের চেয়ে অনেকটা বেশি। কিন্তু রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের আসন সমঝোতা না হওয়ায় এই কেন্দ্রেও অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল।
২০১৪ সালে রাজ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪ টি আসন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে কংগ্রেস ৪ টি আসনেই এগিয়ে থাকলেও একদিকে তাদের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা ভেস্তে যাওয়া, অন্যদিকে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের ফল পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে জঙ্গিপুর, মালদা উত্তর ও মালদা দক্ষিণ, এই ৩ টি আসনেই গত দু’তিন বছরে যথেষ্ট শক্তিবৃদ্ধি করেছে তৃণমূল। ফলে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে এই আসনগুলিতে কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও, এই মুহূর্তে সেখানকার সমীকরণ অনেকটাই পাল্টেছে। বিশেষ করে মালদহ উত্তর কেন্দ্রে ২০১৪ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জেতা মৌসম বেনজির নুর সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন।
পাশাপাশি, পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ার কিছু এলাকায় গত এক বছরে অনেকটাই শক্তিবৃদ্ধি করেছে বিজেপি।
স্রেফ ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফলাফলকে ধরে এরাজ্যের প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের পর্যালোচনা করলে ২০১৯ এর যে সমীকরণ উঠে আসছে, তাতে ৩৮ টি আসনে এগিয়ে তৃণমূল, ৪ টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। কিন্তু তিন বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বা রাজনৈতিক যে পাটিগণিতের হিসেব, তা কি কিছুদিন বাদে শুরু হতে চলা লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রে একশো শতাংশ প্রাসঙ্গিক?
না, তা হওয়া সম্ভব নয়। তবে এরাজ্যে কী ফল হতে পারে আগামী লোকসভা নির্বাচনে?

(নজর রাখুন আগামী পর্বে)

Comments are closed.