নিকোটিন কি করোনাভাইরাস রুখতে সক্ষম? প্রাথমিকভাবে তেমনই ইঙ্গিত ফরাসি বিজ্ঞানীদের গবেষণায়

সিগারেট বা নিকোটিন কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে? এখন তা নিয়েই বিশ্বজুড়ে চলছে গবেষণা। এরই মধ্যে ফরাসি গবেষকদের একটি গবেষণায় এমন ইঙ্গিত মিলছে বলে দাবি।

কী বলছে সেই গবেষণা?

প্যারিসের এক প্রসিদ্ধ হাসপাতালে প্রায় ৪৫০ জন রোগীকে নিয়ে গবেষণার পর এই ধারণায় পৌঁছেছেন গবেষকেরা। তাঁদের মতে, যে সমস্ত রোগী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শুধুমাত্র ৫ শতাংশ এমন রোগী রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত ধুমপান করেন। সমীক্ষা বলছে ফ্রান্সের মোট জনগনের প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষই ধূমপায়ী। কাজেই অধূমপায়ীদের মধ্যেই করোনাভাইরাস বেশি প্রভাব বিস্তার করছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তাঁরা।

এর আগে ব্রিটেনের নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন তাদের একটি রিপোর্টে দাবি করেছিল, চিনে যে সমস্ত রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ধুমপায়ীদের সংখ্যা মাত্র ১২.৬ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনে ধূমপায়ীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ।

গবেষকদের দাবি, সিগারেটের মধ্যে থাকা নিকোটিন মানবদেহের কোষে আস্তরণ তৈরি করার কারণে, শরীরের কোষে করোনাভাইরাসের প্রবেশ প্রতিহত হয়। যার ফলে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে না বলে জানিয়েছেন রিপোর্টের অন্যতম লেখক তথা বিখ্যাত ফরাসি নিউরো বায়োলজিস্ট জিন পেরি চেঙ্গেস।

কিন্তু এখনই এ বিষয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি। গবেষণা সবে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আরও বেশি করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার জন্য সে দেশের স্বাস্থ্য দফতরের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জানা গেছে, গবেষকেরা স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীরে নিকোটিন প্যাচ ব্যবহার করে দেখবেন তাঁরা এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পারছেন কিনা। পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীদের উপরও এই পরীক্ষা করে দেখা হবে।

করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যে দেশগুলি, তাদের অন্যতম ফ্রান্স। এখনও পর্যন্ত ফ্রান্সে মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ২১ হাজারেরও বেশি।

যদিও এ বিষয়ে এখনও অনেক গবেষণা বাকি। বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে কিন্তু ধুমপান থেকে বিরত থাকার পরামর্শই দিচ্ছেন। এছাড়াও করোনা থেকে বাঁচতে কেউ যাতে নিজেদের শরীরের উপর এই নিকোটিন প্যাচের ব্যবহার না করে বসেন, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন তাঁরা।

ধূমপানের কারণে ফ্রান্সে বছরে ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সে দেশে আর কোনও রোগে বছরে এত মানুষ মারা যান না। গোটা বিশ্বে সংখ্যাটা কয়েক কোটি। ফলে করোনা তাড়াতে ধূমপানে ভরসা করলেও আখেরে লাভ কী হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

Comments are closed.