টোটো চালকের ছেলে রাজনের স্বপ্নের দৌড় এখন বঙ্গ ফুটবলে আশার আলো, মহামেডানের বিরুদ্ধে গোল করে পাল্টাবে কি ভবিষ্যৎ?

দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন অনেকেই। ইচ্ছে থাকে বড় দলে খেলার, ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার। সেই স্বপ্ন সফল হয় খুব অল্প কয়েকজনেরই। বেশিরভাগই হারিয়ে যান ময়দান থেকে‌। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছাড়তে হয় অনেককেই। এরকমই এক কঠিন লড়াই লড়ছেন রাজন বর্মন।
সোমবার কলকাতা লিগের কাস্টমস বনাম মহামেডান স্পোটিং ম্যাচে দুরন্ত গোল করেছেন। কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে গোল করেও, অন্ধকার ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর ২৪ পরগনার পলতার রাজন। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা রাজনের। তাঁর বাবা রাম বর্মন আগে মাছ বিক্রি করতেন। বর্তমানে টোটো চালান। রাজন স্বপ্ন দেখেন একটা চাকরি পেয়ে বাবার কষ্ট দূর করবেন। এই বয়সে আর কাজ করতে দেবেন না বাবাকে।

তবে স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে অনেকটা তফাৎ। পলতার পার্থ সেনের ক্যাম্প থেকে উঠে আসা রাজনের। তারপর নবাব ভট্টাচার্যের হাত ধরে ইউনাইটেড স্পোর্টস। দীর্ঘদিন ইউনাইটেড স্পোর্টস এবং তাদেরই অন্যদল পাঠচক্রে খেলেছেন রাজন। খেলতে খেলতেই চোট পান। চোটের জন্য দীর্ঘদিন মাঠের বাইরেও থাকতে হয়েছে। এই সময় তাঁর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছিল ইউনাইটেড স্পোর্টস। চোট কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরেছেন রাজন। তাঁকে যে মাঠে ফিরতেই হত।
শেষ তিন বছর ধরে খেলছেন কাস্টমসে। বাংলার হয়ে খেলে ফেলেছেন সন্তোষ ট্রফিও। সন্তোষ ট্রফিতে গোলও আছে এই স্ট্রাইকারের। প্রয়োজনে খেলতে পারেন মাঝমাঠেও। এখন তাঁর লক্ষ্য একটাই, চাকরি পাওয়া। কাস্টমসে খেললে, চাকরি পাওয়া যায়। সেই স্বপ্ন দেখেন তিনি। শিক্ষাগত যোগ্যতা যাতে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় না হয়ে ওঠে, তার জন্য গ্রাজুয়েশন সম্পূর্ণ করেছেন তিনি। চেষ্টা করছেন অন্য চাকরিরও। এতদিন ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। এখন, তাঁর দাদা একটি বাড়ি করায়, আপাতত সেখানেই থাকছেন। রাজনের স্বপ্ন চাকরি পেয়ে নিজে একটি বাড়ি করবেন। বাবা মাকে ভালো রাখবেন। বাবাকে যাতে আর টোটো চালাতে না হয়। রাজন বলছেন, ‘একটা চাকরি খুব প্রয়োজন। পরিবারকে ভালো রাখতে চাই। ফুটবল খেলেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’
স্বপ্নের পিছনে দৌড়চ্ছেন রাজন। পারবেন কি নিজের স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে? তিন প্রধানের অন্যতম মহামেডানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত গোল, তাঁকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। বলছেন, স্বপ্ন ছুঁয়ে না ফেলা অবধি এভাবেই লড়ে যাবেন ময়দানের প্রতিশ্রুতিবান বাঙালি ফুটবলার।

Comments are closed.