বর্জ্য পরিশোধনে দৃষ্টান্ত ভারতীয়ের, স্বীকৃতি ফোর্বসের

উইলমা রডরিগেজ, বয়স ৫৬। বেঙ্গালুরু নিবাসী এই মহিলার নাম সম্প্রতি উঠে এসেছে মার্কিন পত্রিকা ফোর্বস-এর ভারতীয় সংস্করণে। সমাজের স্বার্থে, উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে, ভিড়ের মাঝে নতুনত্ব বা অনুপ্রেরণাদায়ী কাজ করছেন দেশের এমন ২৫ জন মহিলা উদ্যোগপতিকে নিয়ে সম্প্রতি একটি তালিকা প্রকাশ করেছে এই পত্রিকা। সেই তালিকাতেই জায়গা পেয়েছেন, উইলমা রডরিগেজ। উইলামার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে স্বীকৃতির দাবি রাখে। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা বর্জ্য পরিশোধন নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তৈরি করেছেন নিজস্ব সংস্থা, একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁর সংস্থায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০০ জনের।

উইলমা জানিয়েছেন, ১৯৮৩ সালে ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম কর্পোরেশনে একজন ট্যুর গাইড হিসাবে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। দ্বায়িত্ব ছিল বিদেশি পর্যটকদের দেশের বিভিন্ন পর্যটনস্থল, ঐতিহ্য ঘুরিয়ে দেখানো। সে সময় তাঁকে বিদেশিদের কাছে অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হোত। ‘আপনাদের পর্যটনস্থল, স্থাপত্য, ঐতিহ্য এত সুন্দর, অথচ আপনাদের রাস্তাঘাটে এত নোংরা কেন?’ প্রায়শই এই ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হত তাঁকে। পরে এই চাকরি ছেড়ে উইলমা যোগ দেন ইন্দো-জার্মান চেম্বার্স অফ কমার্সের একটি পত্রিকার এডিটিং বিভাগে এবং তারও পরে যোগ দেন বেঙ্গালুরুর দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। এর মাঝে আঠারোটি বছর পেরিয়ে গেলেও, দেশে সৌন্দর্য এবং অপরিচ্ছন্নতার এরূপ বৈপরিত্যের সহাবস্থান নিয়ে বিদেশি পর্যটকদের করা প্রশ্ন তাঁর মন থেকে যায়নি।

এই চিন্তা থেকেই নতুন দিকে পথ চলা শুরু উইলমা রড্রিগেজের। ২০০১ সালে বেঙ্গালুরুতে তৈরি করেন ‘সাহস’ নামের এক অলাভজনক সংস্থা। যাদের কাজ হবে বর্জ্য পরিশোধন এবং তা রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। প্রথমে স্থানীয় সুপার মার্কেটে গিয়ে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের অপকারীতা সম্পর্কে বোঝাতে শুরু করেন। উৎপন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে পরিষোধনের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ সেখানকার ব্যবসায়ীদের দেন উইলমা এবং তাঁর টিম। এরপর ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি করেন উইলমা রড্রিগেজ। ব্যাঙ্কের বিভিন্ন কঠিন বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল করা শুরু করে ‘সাহস’। ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক লাভেরও সম্ভবনা দেখা দেয়। ২০১২-১৩ সালে ‘সাহস ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন উইলমা। একই সঙ্গে চলতে থাকে সাহস এনজিও এর কাজও।

বর্তমানে রোজ প্রায় ৩০ টন কঠিন বর্জ্য পরিশোধন ও রি-সাইকেল করে এই সংস্থা। ‘সাহস’এর ক্লায়েন্ট এর তালিকায় ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক ছাড়াও রয়েছে মাইক্রসফট, আইবিএম এর মতো বেঙ্গালুরুর নামী ৪৭টি সংস্থা। উইলমা রডরিগেজের এই সংস্থায় বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ২০০ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। যাঁরা বেতন বাদেও মেডিকেল এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো সুবিধাও পান। উইলমা রডরিগেজ জানিয়েছেন, বর্তমানে বেঙ্গালুরুর কর্পোরেট সংস্থাগুলি থেকে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করলেও, ভবিষ্যতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.