বিজেপি কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে আডবাণী, জেটলি, গডকড়ী, রাজনাথ, বিচারপতিদের ১৮০০ কোটি টাকা দিয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা! রিপোর্ট ক্যারাভান ম্যাগাজিনের

যত কাণ্ড ডায়েরির পাতায়! কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পার ডায়েরির পাতায় লেখা কয়েকজনের নাম ও টাকার অঙ্ক নিয়ে শুরু চাপানউতোর। ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে কংগ্রেস সদ্য নিযুক্ত লোকপালকে দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্তের দাবি করেছে।
শুক্রবার ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন। কর্ণাটকের বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, বিচারক এবং আইনজীবীদের ১৮০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাস থেকে আয়কর দফতরের হেফাজতে থাকা নথি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিন।
২০০৯ সালের এই ডায়েরিতে কর্ণাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার নিজের হাতের লেখা রয়েছে বলে দাবি করেছে ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিন। ইয়েদুরাপ্পা কন্নড় ভাষায় বিজেপির একের পর এক শীর্ষনেতার নাম ও তার পাশে তাঁদের দেওয়া টাকার অঙ্ক লিখেছেন। তবে এই টাকা ঠিক কবে দেওয়া হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিনের দাবি, প্রত্যেকটি পাতায় ইয়েদুরাপ্পার সাক্ষর রয়েছে।
ইয়েদুরাপ্পার লেখা সেই ডায়েরির পাতা থেকে দেখা যাচ্ছে, তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিকে দিয়েছেন ১ হাজার কোটি টাকা। অরুণ জেটলি এবং নিতিন গডকড়ীকে দিয়েছিলেন ১৫০ কোটি টাকা করে। রাজনাথ সিংহকে দিয়েছেন ১০০ কোটি টাকা। লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলীমনোহর যোশীকে তিনি দিয়েছিলেন ৫০ কোটি টাকা করে। পাশাপাশি নিতিন গডকড়ীর ছেলের বিয়েতেও তিনি দিয়েছিলেন ১০ কোটি টাকা। এছাড়াও বিচারপতিদের জন্য খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা এবং আইনজীবীদের ৫০ কোটি টাকা ফিজ মিটিয়েছেন।
ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একজন সিনিয়র আয়কর আধিকারিক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছিলেন, এই ঘটনায় আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে কিনা। কিন্তু জেটলি কিছুই বলেননি। যোগাযোগ করা হলেও রিপোর্টে উল্লেখ থাকা বিজেপির নেতাদের কারও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলেও জানিয়েছে ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিন।
ডায়েরিতে কর্ণাটকের ৮ বিধায়কের নামও রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ২০০৮ সালে কর্ণাটকে বিজেপি সরকার গড়তে ইয়েদুরাপ্পাকে সাহায্য করেছিলেন, পরে তাঁরা কর্ণাটকের মন্ত্রী হন বলেও দাবি ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিনের। ডায়েরিতে লেখা আছে, ৭ জন বিধায়ককে ২০ কোটি টাকা করে এবং এক বিধায়ককে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। রিপোর্টে লেখা রয়েছে এই টাকা সরবরাহ করেছিলেন কর্ণাটকের খনি ব্যারন জি জনার্দন রেড্ডি। বর্তমানে বেআইনি অর্থলগ্নি মামলায় জেলে রয়েছেন জনার্দন রেড্ডি।
ডায়েরিতে লেখা আছে, ইয়েদুরাপ্পাকে ২৬ জন মোট ২৬৯০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমারের বাড়িতে আয়কর হানাতে এই ডায়েরিটি বাজেয়াপ্ত করা হয় বলে দ্য ক্যারাভ্যান সূত্রে খবর।
এই প্রেক্ষিতেই এবার বিজেপিকে আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। শুক্রবার কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সূরজেওয়ালা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, এই রিপোর্ট সত্যি না ভুয়ো, তা তদন্ত করে দেখা উচিত। এত বিশাল অঙ্কের টাকার লেনদেন যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে তার তদন্ত করুক লোকপাল। বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে ভোটের ঠিক মুখে বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে এত বিশাল অঙ্কের লেনদেনের অভিযোগ যে ‘চৌকিদার’ নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি বাড়াবে, তাতে সন্দেহ নেই।

Comments are closed.