মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিল্লির রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছিল, কাশ্মীর নিয়ে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিজেপি। জম্মু-কাশ্মীর জোট সরকারে নিজেদের সমস্ত মন্ত্রীকে এদিন দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্য বিজেপি সভাপতিকেও। তার আগে এদিন সকালেই অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ফলে রাজনৈতিক জল্পনা আরও বাড়ে।
সেই জল্পনা সত্যি করেই, মঙ্গলবার দুপুরে জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি-পিডিপি জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল বিজেপি। আর তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মেহবুবা মুফতি। কারণ, বিজেপি সমর্থন তুলে নেওয়ার ফলে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে মুফতির সরকার। কাশ্মীরে মোট ৮৭ বিধানসভা আসনের মধ্যে পিডিপির ২৮ এবং বিজেপির ২৫ টি আসন ছিল।
এদিন দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি নেতা রাম মাধব জানান, ‘পিডিপি’র সঙ্গে আর জোট রাখা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে। তাই জম্মু-কাশ্মীরের জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকায় লাগাতার জঙ্গি সন্ত্রাস এবং রক্তপাতের ঘটনার অবসান করতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি যে জোরাল সেনা অভিযানের পক্ষে এদিন তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন রাম মাধব। এদিন তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, হিংসা এবং কট্টরপন্থা ক্রমে মাথাচাড়া দিচ্ছে কাশ্মীরে। লঙ্ঘিত হচ্ছে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের অধিকার। তাই জাতীয় নিরাপত্তার কথা ভেবে এবং কাশ্মীরকে ভারতের অখণ্ড অংশ হিসেবে ধরে রাখতে সেখানে অবিলম্বে রাজ্যপালের শাসন জারি করা প্রয়োজন’। পাশাপাশি বিজেপির দাবি, কাশ্মীর উপত্যকার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছে। পাকিস্তানের তরফ থেকে সংঘর্ষ বিরোধী চুক্তি লঙ্ঘনের যে ঘটনা ঘটছে, তারও শেষ দেখতে চায় সরকার। বিজেপির অভিযোগ, পিডিপি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দিচ্ছে পিডিপি নেতৃত্ব।
এদিকে, বিজেপি সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা করার পরই, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন মেহবুবা মুফতি। সংবিধান অনুযায়ী এখন রাজ্যের দায়িত্বভার যাবে রাজ্যপালের হাতে। পিডিপি’র তরফে প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, বিজেপির এই সিদ্ধান্তে তারা অবাক। এ বিষয়ে আগে থেকে কোনও তথ্যই তাদের কাছে ছিল না। বিজেপির এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘কাশ্মীরকে নরকে পরিণত করে অবশেষে সেখান থেকে সরে এল বিজেপি’। তাঁর কটাক্ষ, ‘এই জোট সরকারের আমলেই গত তিন বছরে সর্বাধিক সেনা জওয়ান ও সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে’। পিডিপি’র সঙ্গে জোটের কোনও সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছেন এই কংগ্রেস নেতা। শিবসেনার প্রতিক্রিয়া, দেশ বিরোধী এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। জোর করে এই জোট সরকার চালিয়ে নিয়ে গেলে ২০১৯ সালে তার ফল পেতে হত বিজেপি’কে।