Medicine for Corona Virus: করোনা মুক্তির তথ্য তালাশ।

করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও বানিয়ে উঠতে পারেনি কোনও দেশ। এই মারণ ভাইরাসের কোপে দুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ, প্রাণ গিয়েছে প্রায় ১৯ হাজার মানুষের। ভারতেও দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বুধবার সকাল পর্যন্ত দেশে ৫৮২ জন করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এই মুহূর্তে সবারই প্রশ্ন করোনা আক্রান্তকে সুস্থ করার ওষুধপাতি কী? থাকলে তা কতটা কার্যকরী?

 

Medicine for Corona Virus – কী এবং কেন?

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (Hydroxychloroquine) অ্যাজিথ্রোমাইসিন (azithromycin)

একদল গবেষক দাবি করেছেন, অ্যান্টি- ম্যালেরিয়া ড্রাগ, Hydroxychloroquine ও Chloroquine Phosphate ব্যবহারে শরীরে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান,  করোনা মোকাবিলায় Hydroxychloroquine সঙ্গে Azithromycin এর কম্বিনেশন, মেডিসিনের ইতিহাসে এই দুই ওষুধের মিশ্রণ গেম-চেঞ্জার হতে চলেছে। আমেরিকা যে এর সুফল পেয়েছে, তা-ও তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হলে তাঁকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ Hydroxychloroquine দেওয়া যেতে পারে। তবে তা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। মোট দুই গ্রুপ, যাঁরা এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিত্‍‌সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যান্টি-ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)।

 

করোনা মোকাবিলায় Antimalarial Drug (Hydroxychloroquine/Chloroquine) ব্যবহারে সতর্কতা

Antimalarial Drug

 

দেশে করোনাভাইরাসের জন্য গঠিত মেডিক্যাল টাস্ক ফোর্সের হুঁশিয়ারি, সংক্রামিত হওয়া এড়াতে এটাই যথেষ্ট নয়। সব ব্যক্তিকে সমস্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব (Social Distancing) বজায় রাখা, বারবার হাত ধোয়ার কথাও বলেছে মেডিক্যাল টাস্ক ফোর্স। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার জারি করা অ্যাডভাইসরিতে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে চিকিৎসক মনে করলে হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন দিতে পারেন করোনা আক্রান্তকে। করোনা মোকাবিলায় যে ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ কার্যকরী তা পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে বলে ওই অ্যাডভাইসরিতে বলা হয়েছে। তবে ১৫ বছরের নীচে কোনও আক্রান্তের উপর এই ড্রাগ প্রয়োগ করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

কী বলছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)?

Hydroxychloroquine দিয়ে কারও থেরাপি চলার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাড়িতে গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হবে। তিনি রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধ কেনা যাবে না। এই ওষুধ সেবনের পর কোভিড-১৯ ছাড়া অন্য কোনও লক্ষণ দেখা দিলে, তাঁদের দ্রুত সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলা হয়েছে অ্যাডভাইসরিতে।

 

করোনা মোকাবিলায় Antimalarial Drug ব্যবহার নিয়ে সাবধানতা

সম্প্রতি  ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স সবুজ সংকেতও দিয়েছে এই ব্যাপারে। কিন্তু কিছু বিধিনিষেধও রয়েছে। যেমন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। গত মঙ্গলবার ড্রাগস কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্টের তরফে অল কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ দিল্লিকে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশিকায় লেখা রয়েছে, ‘আপনারা জানেন নোভেল করোনাভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতেও এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। দিল্লিতেও এর প্রভাব পড়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, দিল্লিতে কিছু মানুষ করোনা সংক্রমণ রুখতে হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন, ক্লোরোকুইন, রিটোনাভিরের মতো ওষুধ কিনছে। এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানানো হচ্ছে, সব কেমিস্ট ও ড্রাগিস্টকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য যাতে কোনও রেজিস্টার্ড মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার যাঁর মেডিসিন ডিগ্রি আছে কিংবা পালমোনোলজিস্টের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধ বিক্রি করা না হয়। ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক আইন ১৯৪০-এর আওতায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়। যদি কোনও কেমিস্ট বা ড্রাগিস্ট এই নিয়ম না মানেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় এই নির্দেশিকায়।

 

করোনার চিকিৎসায় Hydroxychloroquine নিয়ে বিভ্রান্তি

Hydroxychloroquine

 

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দেন, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা দুটো ড্রাগ Hydroxychloroquine ও Chloroquine Phosphate করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর পরীক্ষা এখনও চলছে। কিন্তু ওই একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের ডিরেক্টর ডক্টর অ্যান্থনি এস ফউসি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এই ড্রাগের ব্যবহারকে মান্যতা দেয়নি আমেরিকা।

মার্কিন প্রশাসন ছাড়াও করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরালের পাশাপাশি, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ‘হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে জর্ডন প্রশাসন। এ ছাড়া চিনেও করোনা আক্রান্তদের উপর প্রয়োগ হয় Antimalarial Drug। কিন্তু এর ব্যবহার নিয়ে দ্বিমত রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে। কেবল গুরুতর অসুস্থদের ক্ষেত্রে এই ড্রাগ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে জর্ডনের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। জর্ডনের এফডিএ-র প্রধান ডঃ হাই ওবেইদাত একটি রিপোর্টে জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর সংস্থা হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও আইনের ভিত্তিতে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ওষুধ কোনও ভাবেই করোনাভাইরাসের মতো মারণ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তি যখন দ্বিতীয় পর্যায় পৌঁছবে, সে ক্ষেত্রেই এই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।

 

করোনা আতঙ্কে সতর্ক হতে গিয়ে বিপত্তি

আমেরিকার অ্যারিজোনা প্রদেশের মারিকোপা কাউন্টির বাসিন্দা এক দম্পতি নোভেল করোনা নিয়ে আতঙ্কের জেরে কোনওরকম উপসর্গ না দেখা দেওয়া সত্ত্বেও আগাম সতর্কতা নিতে চেয়েছিলেন। আর তাতেই বিপত্তি বাধে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধের কথা উল্লেখ করেন ট্রাম্প। টিভিতে ট্রাম্পের সেই বক্তৃতা দেখে বাড়িতে রাখা অ্যাকোরিয়াম পরিষ্কার করার রাসায়নিক, যার অন্যতম উপাদান ক্লোরোকুইন ফসফেট খেয়ে বসেন দম্পতি। সেই রাসায়নিক মুখে দেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা দু’জনেই। প্রথমে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব দেখা দেয় তাঁদের। সেই অবস্থায় স্থানীয় ‘ব্যানার হেল্থ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় স্বামীর। এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে খবর।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগ ছাড়া কোনও রাজনীতিকের কথা কানে তোলা উচিত নয়, এ নিয়ে ইন্টারনেটের উপরও ভরসা করা উচিত নয়। ডাক্তারি  পরীক্ষা ছাড়া শুধুমাত্র লক্ষণ দেখে সন্দেহ জাগলেই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলেও জানায় WHO।

 

করোনা মোকাবিলায় Favipiravir

সম্প্রতি একদল চিনা বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, করোনা মোকাবিলায় তাঁদের হাতে এসেছে এক অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। কী সেটা? কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ফ্যাবিপিরাভির নামে একটি অ্যান্টি ভাইরাল বেশ কার্যকর বলে দাবি করেছে চিন। জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য জাপানি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ফ্যাবিপিরাভি আবিষ্কার করেন। সেটাই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করছে বলে দাবি চিনা চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের। যদিও এ নিয়ে গবেষণা জারি রয়েছে।

 

করোনা মোকাবিলায় HIV ও ইবোলা-র ওষুধ

এইচআইভি’র ওষুধ লোপিনাভির ও রিটোনাভির করোনাভাইরাসের বিপক্ষে কার্যকর হবে বলে আশা করেছিলেন একদল গবেষক। কিন্তু এই দু’টির পরীক্ষার ফলও হতাশাজনক। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার কমানো, ভাইরাস কমানো কিংবা সুস্থ করে তোলা, কোনওটিই অর্জন করা যায়নি এই ওষধ প্রয়োগের মাধ্যমে। তবে যেহেতু এই ওষুধের পরীক্ষা মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগীদের মধ্যে চালানো হয়েছিল (যাদের প্রায় চারভাগের একভাগ মারা যান), তাই এমনও হতে পারে যে এটি সংক্রমণের ওই পর্যায়ে রোগীদের শরীরে কাজ করে না। এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা।

কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানায়, এইচআইভি ও ইবোলা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ প্রয়োগে ইতিবাচক সাড়া মিলছে। কিন্তু ম্যালেরিয়া, এইচআইভি হোক বা ইবোলা ভাইরাস মারার ওষুধ, কিংবা কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, কোনওটার প্রয়োগেই একশো শতাংশ সাড়া মেলেনি। এগুলি আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা, কোন স্টেজে তিনি আক্রান্ত  এসব বিষয়ে নজর রেখে তবেই প্রয়োগ করা হয়। করোনার প্রতিষেধক ও নির্ভরযোগ্য ওষুধের Medicine for Corona Virus) সন্ধানে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের তাবড় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

আপাতত সোশ্যাল ডিস্টান্সিং (Social Distancing), বারবার হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, আক্রান্তের কাছাকাছি গেলে বা সর্দি-কাশি হলে মাস্ক ব্যবহারের মতো সাবধানতার উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।

Comments are closed.