২৪০ টাকা প্রতি ডোজ, সিরাম ইন্সস্টিটিউটে তৈরি হচ্ছে সস্তার করোনা টিকা, গেটস ফাউন্ডেশনের অনুদানে সস্তায় ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু তার দাম কত হতে পারে, সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর। মূল চিন্তা, ভ্যাকসিন এলেও তা কেনার সাধ্য হবে তো সবার?

এবার এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন ধনকুবের বিল গেটস। তাঁর সংস্থার আর্থিক অনুদানের ফলে করোনা টিকাকে সাধারণের সাধ্যের মধ্যে আনা সম্ভব, এ কথা ঘোষণা করল পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইন্সস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।

এ বছরের শেষে কিংবা সামনের বছরের গোড়ায় করোনা ভ্যাকসিন বাজারে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দিন-রাত এক করে সিরাম ইন্সস্টিটিউটে চলছে তারই প্রস্তুতি। কিন্তু ভ্যাকসিনের দাম নিয়ে শুরু থেকেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কেউ দাবি করছিলেন দাম হবে হাজার টাকার কম। আবার কারও মতে, শুরুতে দাম এতটাই বেশি হবে যে তা তৃতীয় বিশ্বের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু এসবই ছিল জল্পনা। শুক্রবার পুণের সিরাম ইস্টস্টিটিউটের আদর পুনাওয়ালা জানিয়ে দিলেন, বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তির ফলে ভারতে করোনা ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের দাম হতে পারে ৩ ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় ২৪০ টাকারও কম। প্রাথমিক পর্যায়ে তৈরি করা হবে ১০ কোটি ডোজ। ভারতে চাহিদা পূরণের পর তা ৯২ টি দেশে রফতানি করা হবে।

গরিব দেশগুলোর নাগরিকেরা যাতে সুলভে করোনা ভ্যাকসিন পেতে পারেন, সে জন্য সিরাম ইন্সস্টিটিউকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক অনুদান দিয়েছে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। আদর পুনাওয়ালা জানাচ্ছেন, সেই অনুদানে ভর করেই সস্তায় টিকা বানানোর কথা বলছেন তাঁরা।

গোটা বিশ্বে করোনা টিকার গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে গবেষণায় সবচেয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নোভাভ্যাক্সের গবেষণাও শেষ পর্যায়ে। মনে করা হচ্ছে এরকমই কয়েকটি ভ্যাকসিন সবচেয়ে আগে বাজারে চলে আসতে পারে। ঘটনাচক্রে এই দুটি ভ্যাকসিন তৈরিরই বরাত সেই পুণের সিরামের হাতে।

এছাড়াও করোনা ভ্যাকসিন গবেষণার প্রথম দিকে থাকা মডার্না জানিয়েছে তাদের ভ্যাকসিনের দাম হতে পারে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ মার্কিন ডলার। যা ভারতীয় মুদ্রায় ৩,৭০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা। ফাইজারের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের দাম হতে পারে ভারতীয় মুদ্রায় ৩ হাজার টাকা। পুণের সিরাম ইন্সস্টিটিউট আগে জানিয়েছিল অক্সফোর্ডের টিকার প্রতি ডোজের আনুমানিক দাম হতে পারে হাজার টাকার কম।

তবে এ বিষয়ে একটি কথা মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তা হল, বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনের দামে তারতম্য হতে পারে। আবার একই দেশে এক ভ্যাকসিনের দাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মডার্নার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের দাম ধরা হয়েছে ৩৯ মার্কিন ডলার। কিন্তু এই দামে টিকা বিক্রি হবে কেবল আমেরিকার বাজারে। অন্যান্য দেশে বিক্রির সময় দাম কমে যাবে। অ্যাস্ট্র্যাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং ফাইজার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা মুনাফার কথা ভেবে টিকা বানাবেন না। তাই কোনও লাভ না রেখেই টিকা তুলে দেওয়া হবে মানুষের হাতে। যদিও মডার্না কস্ট প্রাইসে টিকা বিক্রি করবে না বলে জানিয়ে রেখেছে।

ভ্যাকসিন-রাজনীতির কথা শোনা গিয়েছে হু’য়ের মুখে। এমনকী অক্সফোর্ডের গবেষণার একেবারে প্রাথমিক স্তরে অধ্যাপকদের মুখেও এ নিয়ে আশঙ্কার কথা শোনা গিয়েছিল। বিল গেটস নিজে জানিয়েছিলেন, ভ্যাকসিন যাতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেজন্য সরকারগুলোকে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে। গাভিও চিন্তিত ভ্যাকসিনের সুষম বিপণন নিয়ে। এই অবস্থায় গেটস ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় তুলনামূলকভাবে সস্তায় করোনা ভ্যাকসিন আনার কথা জানাল পুণের সিরাম ইন্সস্টিটিউট।

Comments are closed.