ফড়নবিসের আমলে ঘোড়া মেলার দায়িত্ব পাওয়া গুজরাতের সংস্থার ৩২১ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল ঠাকরে সরকারের

আগের জোট সরকারের অনেক সিদ্ধান্তই খারিজ করার পথে হাঁটতে চলেছে মহারাষ্ট্রের নতুন জোট সরকার। তার মধ্যে রয়েছে মোদীর সাধের বুলেট প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার হওয়া সমাজকর্মীদের উপর থেকে ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার,
অ্যারে কলোনির প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার ইত্যাদি। এবার মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের আমলে গুজরাতের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গে ৩২১ কোটি টাকার চুক্তিতে ‘গুরত্বপূর্ণ আর্থিক অনিয়ম’ এর অভিযোগ করে তা বাতিলের নির্দেশ দিল মহারাষ্ট্র সরকার।
আহমেদাবাদের লাল্লোজি অ্যান্ড সনস নামে এই সংস্থার সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর চুক্তি করে মহারাষ্ট্র পর্যটন উন্নয়ন নিগম (এমটিডিসি)। এই সংস্থাটি এর আগে কুম্ভ মেলা, রান উৎসবের মতো একাধিক বড় উৎসবের দায়িত্ব পেয়ে এসেছে। এদেরই মহারাষ্ট্রের নানদুরবারে সরংখেড়া চেতক উৎসব বা ঘোড়া মেলার পরিকল্পনা, নকশা প্রস্তুত সহ মেলার যাবতীয় কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মহারাষ্ট্রে তৎকালীন বিজেপি সরকার ও গুজরাতের এই সংস্থার মধ্যে কয়েকশো কোটি টাকার চুক্তি হয়। ক্ষমতায় এসেই ওই চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দিল নয়া জোট সরকার।
গত ২৮ নভেম্বর সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উদ্ধব ঠাকরে শপথ অনুষ্ঠানের দিনই রাজ্যের মুখ্যসচিব অজয় মেহতা পর্যটন নিগমকে ওই চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয়, এই চুক্তি রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দিষ্ট নীতিও মানা হয়নি।
প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের এই ঘোড়া মেলা দেশের অন্যতম প্রাচীন মেলা হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন মন্ত্রী জয়কুমার রাওয়ালের নেতৃত্বাধীন এমটিডিসি-র বোর্ড ডিরেক্টররা এই মেলাকে বৃহত্তরভাবে প্রচার করতে সচেষ্ট হন। এরপর টেন্ডারের মাধ্যমে বরাত পায় আহমেদাবাদের ওই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৬-২৭ সাল পর্যন্ত মেলা সাজানো এবং মার্কেটিংয়ের জন্য এমটিডিএস ও ওই সংস্থার মধ্যে ৩২১ কোটি টাকার চুক্তি হয়। পাশাপাশি এই ১০ বছরে আরও ৭৫ কোটি টাকা ভিজিএফ বা ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডের জন্য ওই সংস্থাকে দেওয়ার কথা হয়।
যদিও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থ দফতরের তরফে এক অডিটে অভিযোগ করা হয়, এই সংস্থাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মহারাষ্ট্র বিধানসভার বাদল অধিবেশনেও মন্ত্রী রাওয়ালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয় তৎকালীন বিরোধী কংগ্রেস ও এনসিপি। পাশাপাশি, এই মেলা থেকে গত দু’বছর সরকার কোনও রোজগার করতে পারেনি বলেও অগাস্ট মাসে এক তথ্যে জানায় পর্যটন দফতর। এই পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাতের ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দিল উদ্ধব ঠাকরের জোট সরকার।

Comments are closed.