আস্থা ভোটের মুখোমুখি হলেন না। তার আগেই ইস্তফা দিলেন দু’দিন আগেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া ইয়েদুরাপ্পা। কংগ্রেস-জেডিএস জোটের পক্ষ থেকে বারবারই দাবি করা হচ্ছিল, বিজেপির সঙ্গে যথেষ্ট সংখ্যক বিধায়ক নেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার। শনিবার সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনায় গোটা দেশের নজর ছিল কর্ণাটক বিধানসভার দিকে। কিন্তু আস্থা ভোটে জেতা সম্ভব নয় বুঝেই শেষ মুহূর্তে ইয়েদুরাপ্পা রণে ভঙ্গ দিলেন। বিধানসভায় আবেগঘন ভাষণ দিয়ে আস্থা ভোট এড়িয়ে রাজভবনে ইস্তফা দিয়ে গেলেন ইয়েদুরাপ্পা।
এদিন বিধানসভায় নিজের হার স্বীকার করে নেওয়ার আগে প্রায় ২০ মিনিট আবেগঘন বক্তব্য পেশ করেন বিএস ইয়েদুরাপ্পা। সেখানে তিনি বলেন, তাঁর জীবন সংগ্রামের। তাই সরকারের পতন হলেও, মানুষের জন্য তাঁর এই সংগ্রাম চলবে। জোর গলায় তাঁর দাবি, ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে ২৮টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি তেই জিতবে বিজেপি। এদিন আক্ষেপের সুরে ইয়েদুরাপ্পা বলেন, কর্ণটকের জনগন যদি বিজেপিকে ১০৪টি আসনের যায়গায় ১১৩ টি আসন দিতেন তাহলে স্বর্গে পরিণত হতে পারত রাজ্য। এদিন বিরোধী কংগ্রেস-জেডিএস জোটকেও ছেড়ে কথা বলেননি বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কটাক্ষ ভোটের সময় যে সিতারামাইয়া এবং কুমারস্বামী পরস্পরকে বিষদগার করেছিলেন, জণগণের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েও ক্ষমতায় আসতে আজ তারাই পরস্পরের হাত ধরেছেন।
আস্থাভোটকে কেন্দ্র করে এদিন সকালথেকেই সরগরম ছিল কর্ণাটক। সেই আঁচ পোঁছয় দিল্লিতেও। কর্ণাটকের রাজ্যপালের নির্দেশে এদিন আস্থা ভোট নেওয়ার কথা ছিল প্রো-টেম স্পিকারের। বিজেপির প্রবীণ বিধায়ক কেজি বোপাইয়াকে প্রো-টেম স্পিকারের দ্বায়িত্ব দেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শনিবার সকালে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। দাবি প্রো-টেম স্পিকারের পদ থেকে সরাতে হবে বোপাইয়াকে। পরে কংগ্রেসের এই আবেদন খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। নির্দেশ দেওয়া হয় আস্থা ভোটের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তা সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে টেলিভিশনে। আদলতের নির্দেশের পরই প্রোটেম স্পিকার এদিন আস্থাভোট শুরুর আগে নবনির্বাচিত সব বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করান।
কিন্তু নাটকের তখনও বাকি। বিজেপি যাতে বিরোধী বিধায়কদের ভাঙ্গিয়ে নিজেদের শিবিরে নিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই কংগ্রেস ও জেডিএসের সব বিধায়ককে হায়দরাবাদ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শনিবার সেখান থেকে ফিরে সরাসরি বিধানসভায় উপস্থিত হন বিরোধী বিধায়করা। প্রথমে বিরোধী ১১৬ জন বিধায়কের মধ্যে আনন্দ সিংহ এবং প্রতাপ গৌড়া পাটিল নামের দুই কংগ্রেস বিধায়কের খোঁজ পাওয়া না গেলেও পরে তাদের খোঁজ মেলে। এরই মধ্যে যখন বিধানসভায় বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠের পর্ব চলছে বাইরে ফের বোমা ফাটায় কংগ্রেস। একটি অডিও টেপ প্রকাশ করে তাদের দাবি, কংগ্রেস বিধায়ক বিসি পাটিলকে বিজেপিকে সমর্থন করার বদলে ফোন করে মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা। আরেক কংগ্রেস বিধায়কের স্ত্রীকেও নাকি প্রলোভন দেখানো হয়েছিল বিজেপির তরফে। বিওয়াই বিজয়েন্দ্র নামে এক বিজেপি বিধায়ক নাকি তাঁকে বলেছিলেন, বিধায়ক স্বামীকে আস্থাভোটে বিজেপি’কে সমর্থন দিতে রাজি করাতে পারলে তাঁর স্বামীকে মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি ১৫ কোটি টাকাও দেওয়া হবে।
ইয়েদুরাপ্পার ইস্তফার পরই শনিবার সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে এসেছেন কংগ্রেস-জেডিএস জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কমারস্বামী। জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী পদে তিনি সোমবার শপথ নিতে পারেন।